Monday, 4 January 2016

শিক্ষকরা ব্যস্ত ব্যক্তিস্বার্থ ও দলীয় রাজনীতি নিয়ে

২৭ এপ্রিল থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকদের আন্দোলনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ধরনের অচলাবস্থা অনিশ্চয়তার পরিবেশ তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা নিরসনের লক্ষ্যে ২৪ আগস্ট শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আন্দোলনকারী শিক্ষকদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় বৈঠক করেছেন সংবাদমাধ্যমে জানতে পারলাম, বৈঠক নাকি ফলপ্রসূ হয়েছে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা ১৫ দিনের জন্য চলমান কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন তবে ১৫ দিন পর তাদের দাবি মেনে নেয়া না হলে তারা আবার আন্দোলন শুরু করবেন বলেছেন অর্থাৎ সাময়িকভাবে চলমান সংকটের নিরসন ঘটলেও এর স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি 
ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের আনীত অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষক লাঞ্ছনা ঘটনার বিচার না করা, ভর্তি পরীক্ষায় অনিয়ম, সংবাদমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে অশালীন আপত্তিকর বক্তব্য প্রদান, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, অযোগ্য প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের চেষ্টা, অমুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তিসহ অন্যান্য অনিয়ম দুর্নীতি। ভিসির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোর মধ্যে অধিকাংশের জোর ভিত্তি নেই। তবে তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ নন। কিন্তু তাই বলে পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য দিনের পর দিন কাউকে অবরুদ্ধ করে রাখা কতটা যুক্তিসঙ্গত? 
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন নতুন কোনো বিষয় নয়। ইতিপূর্বেও এমন আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে এবং অধ্যাপক কাজী সালেহ আহমদ, অধ্যাপক আলাউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক জসিম উদ্দীন আহমদ এবং সর্বশেষ অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। পূর্ববর্তী ভিসিদের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। তবে বর্তমান ভিসির পদত্যাগের দাবি অযৌক্তিক- এটুকু বলতে পারি। কথাটা কারও পক্ষ কিংবা বিপক্ষ অবলম্বন করে নয়, বাস্তবতার ভিত্তিতেই বলছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ একজন শিক্ষার্থী হিসেবে লক্ষ্য করেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে যখনই কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য হয়, ঠিক তখনই শিক্ষকদের একাংশ বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে আন্দোলন শুরু করেন। এসব আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ভিসিকে চাপের মধ্যে রেখে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করা। কিন্তু যখনই তা ব্যর্থ হয়, আন্দোলন তখন ভিসির পদত্যাগের দাবিতে গিয়ে ঠেকে। অর্থাৎ এসব আন্দোলনের নেপথ্যে থাকে শিক্ষকদের ব্যক্তিগত স্বার্থ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব। প্রকৃতপক্ষে এসব আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো অংশগ্রহণ থাকে না। তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, এজন্য জাতীয় রাজনীতিও অনেকাংশে দায়ী। দলীয় বিবেচনায় ভিসি নিয়োগ পদ্ধতির পরিবর্তন না হলে ধরনের জটিলতা চলতেই থাকবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় ভিসি নিয়োগের ফলে শিক্ষাঙ্গনে জ্ঞানচর্চার চেয়ে দলীয় রাজনীতিচর্চা বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ভিসির পরিবর্তন হয় কিন্তু শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ কি ফিরে আসে? গত বছরের ২৫ জুলাই ভিসি হিসেবে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের দায়িত্ব গ্রহণের পর ভেবেছিলাম সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু গভীর দুঃখ হতাশার সঙ্গে লক্ষ্য করছি- অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাই বলার অপেক্ষা রাখে না, ভিসি পরিবর্তনের চেয়েও গুরুত্বর্পূণ বিষয় হল শিক্ষকদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনা 
শিক্ষকদের আন্দোলনের ফলে সময়মতো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় না। স্থবির হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম। ফলে মারাত্মক সেশনজটের কবলে পড়তে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষার্থী। ফলে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। শিক্ষকদের প্রধান দায়িত্ব নিয়মিত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করা। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক ব্যস্ত থাকেন ব্যক্তিস্বার্থ দলীয় রাজনীতি নিয়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সম্ভবত দেশের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেখানে শিক্ষার্থীদের চেয়ে শিক্ষকদের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম বেশি বিঘিœ হয়। শিক্ষকরা নিশ্চয়ই অবগত আছেন, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। অভিভাবকদের কষ্টার্জিত টাকায় তাদের পড়াশোনা চলে। অনেক শিক্ষার্থী টিউশনিসহ বিভিন্ন কাজ করে পড়াশোনার অর্থ জোগাড় করে থাকে। শিক্ষকদের উদ্দেশে বলছি- সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দয়া করে একটু ভাবুন।

No comments:

Post a Comment