প্রাচীন স্থাপত্যকলার বহু
অম্লান নিদর্শন
কালের সাক্ষী
হয়ে দেশের
নানা প্রান্তে
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে
রয়েছে।
এসব স্থাপত্যের
কিছু প্রায়
ধ্বংসপ্রাপ্ত, কিছু আবার আপন সৌন্দর্য
নিয়ে আজো
টিকে আছে। দিনাজপুর
জেলা শহর
থেকে ২১
কিলোমিটার দূরে কাহারোল থানায় অবস্থিত
এমনই একটি
প্রাচীন স্থাপত্য
কান্তজী মন্দির। শুধু
দেশে নয়,
উপমহাদেশের মন্দির স্থাপত্যের এটি এক
অপূর্ব নিদর্শন। কান্তজীর
মন্দিরের পরিচিতির
ব্যাপ্তি আন্তর্জাতিক
পরিসরে।
ভ্রমণপিপাসু অনেকে প্রাচীন এ স্থাপত্য
দেখতে আসেন। কান্তজীর
মন্দির নির্মিত
হয় আজ
থেকে প্রায়
আড়াইশ বছর
আগে।
দিনাজপুরের জমিদার মহারাজা প্রাণনাথ রায়
১৭২২ সালে
পোড়ামাটির গায়ে নানা রকম অলঙ্করণসমৃদ্ধ
মন্দিরটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তবে
জীবদ্দশায় এ মন্দিরের নির্মাণকাজ তিনি
শেষ করে
যেতে পারেননি। পরে
তার পোষ্যপুত্র
রামনাথ রায়
১৭৫২ সালে
মন্দির নির্মাণ
সম্পন্ন করেন। তিনি
মন্দিরটি শ্রীকৃষ্ণ
দেবের উদ্দেশে
উত্সর্গ করেন। শুরুতে
মন্দিরের চূড়ার
উচ্চতা ছিল
৭০ ফুট। ১৮৯৭
সালে মন্দিরটি
ভূমিকম্পের কবলে পড়লে চূড়াগুলো ভেঙে
যায়।
মহারাজ গিরিজানাথ
মন্দিরের ব্যাপক
সংস্কার করলেও
এর চূড়াগুলো
আর সংস্কার
করা হয়নি। মন্দিরের
প্রাঙ্গণ আয়তাকার
হলেও পাথরের
ভিত্তির ওপর
দাঁড়ানো ৫০
ফুট উচ্চতার
মূল মন্দিরটি
বর্গাকার।
দূর থেকে
মন্দিরটি দেখতে
রথের মতো
মনে হয়। মন্দিরটি
কান্তনগরে অবস্থিত (বিরাট রাজ্য) বিধায়
একে কান্তনগর
মন্দির বলা
হয়।
মন্দিরের চূড়াগুলো
নয়টি রত্ন
দিয়ে সজ্জিত
(রত্নগুলো এখন নেই) করার কারণে
এটাকে নবরত্ন
মন্দিরও বলা
হয়।
তবে কান্তজীউ
বা কান্তজী
নামে স্থাপনাটি
অধিক পরিচিত। কান্ত
শব্দের অর্থ
কৃষ্ণ।
দেবতাকে সম্মান
দেখিয়ে ‘জী’
যোগ করে
বলা হয়
কান্তজী।
মন্দিরটি আকারে
খুব বড়
না হলেও
দেখতে খুবই
সুন্দর।
স্থাপত্যরীতি, গঠনবিন্যাস ও শিল্প চাতুর্য
মন্দিরটিকে সামগ্রিকভাবে অনিন্দ্যসুন্দর
করে তুলেছে। মন্দিরের
দেয়াল সর্বত্র
বিচিত্র মূর্তিখচিত
টেরাকোটায় শোভিত। পুরো মন্দিরে
১৫ হাজারের
মতো টেরাকোটা
টালি রয়েছে। মন্দিরের
দেয়ালের ভেতর-বাইরে সামান্যতম
জায়গাও অনাবৃত
নেই।
পৌরাণিক চিত্রসংবলিত
টেরাকোটা ছাড়াও
মন্দিরের দেয়ালের
বিভিন্ন স্থানে
নারী-পুরুষ,
যোদ্ধা-শিকারি,
নৃত্যরত রমণী,
নৌকার মাঝি,
পালকি প্রভৃতি
আঁকা রয়েছে। চিত্রগুলো
তত্কালীন সময়ের
সমাজ জীবনের
পরিচায়ক।
অবসরে ঘুরে
দেখে আসতে
পারেন প্রাচীন
এ স্থাপত্য।
No comments:
Post a Comment