বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী প্রায় ১৪ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর বেতন-ভাতা শতভাগ বাড়ানোর সুপারিশ করে প্রতিবেদন ছাপানোর কাজ সম্পন্ন করেছে জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশন। এতে সর্বনিম্ন মূল বেতন (চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের) বর্তমানের ৪ হাজার ১০০ থেকে বাড়িয়ে ৮ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর সর্বোচ্চ বেতন (মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের) বর্তমানের ৪৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করবে বলে জানা যাচ্ছে। বিদ্যমান ২০টি গ্রেডকে ১৬টি গ্রেডে নামিয়ে এনে প্রতিটিতেই কম-বেশি ১০০ শতাংশ বেতন বাড়ানোর সুপারিশ রেখেছে কমিশন। বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ধরা হয়েছে মূল বেতনের ৫ শতাংশ।
আগামী জুলাইয়ে নতুন এ পে-স্কেল কার্যকর হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য নিঃসন্দেহে এটা সুখবর এবং বিষয়টা যৌক্তিকও বটে। কারণ সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেতন-বোনাস নির্ধারণ করা খুবই জরুরি। এছাড়া মানুষের কর্মেও আগ্রহ থাকে না। নতুন পে-স্কেল সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য কতটুকু কল্যাণকর হবে জানি না। তবে স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষের জন্য হবে দুঃসংবাদ, যদি এর প্রভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম নতুন করে বাড়ে। কারণ এমনিতেই দেশে বিভিন্ন জিনিসের দাম অল্প আয়ের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। এর পর যদি নতুন করে মূল্যস্ফীতি ঘটে, তা হবে সাধারণ মানুষের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক প্রকাশিত এক তথ্যে দেখা যাচ্ছে, দেশে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হার ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ। আর কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সম্প্রতি প্রকাশিত জরিপের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত এক বছরে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ১১ শতাংশ। সুতরাং মূল্যস্ফীতির বিষয়টা একেবারে অবহেলা করা যাচ্ছে না। অতীতে যখনই নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তখনই তার প্রভাবে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে।
বেতন বৃদ্ধির কথা শুনলেই যেন আমাদের দেশে বাড়িভাড়া থেকে শুরু করে সব প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম জ্যামিতিক হারে বাড়ে! নতুন পে-স্কেলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে যদি বাজারে অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে, তাহলে স্বল্প আয়ের মানুষের যেমন কষ্ট বাড়বে, তেমনি বেতন বৃদ্ধির সুফল থেকে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বঞ্চিত হবেন। তাদের জীবনযাত্রার মানে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে না। সুতরাং নতুন বেতন কাঠামো অর্থনীতিতে যাতে উচ্চমূল্যস্ফীতির সম্ভাবনা তৈরি করতে না পারে, সরকারকে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। দেশের পোশাক শিল্পসহ বেসরকারি ব্যাংক, বীমা ও কলকারখানায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির দাবি সামনে চলে আসতে পারে। শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে জোটবদ্ধ হতে পারেন। এক্ষেত্রে তারা হয়তো আন্দোলন-বিক্ষোভের পথও বেছে নিতে পারেন। সরকারকে এ বিষয়ও বিবেচনায় রাখতে হবে। পাশাপাশি জনগণের জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার মান উন্নত ও নিশ্চিত করতে হবে।
গবেষণায় দেখা গেছে দেশের সরকারি খাতগুলো সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত। ঘুষ ছাড়া যেন এখানে কোনো কাজই হয় না! সরকারি চাকরিজীবীদের দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে আন্তরিকতা ও সততার পরিচয় দিতে হবে। তাদের মনে রাখতে হবে, বর্ধিত বেতনের জোগানদাতা এ দেশের জনগণ। তবে বেতন বাড়ানোর পরও যদি কেউ দুর্নীতি করেন, তাহলে আইনের মাধ্যমে তাদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। উচ্চহারে বেতন নেবেন আবার ঘুষও খাবেন, তা তো হতে পারে না। সর্বোপরি বেতন বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ যাতে না বাড়ে, সেজন্য সরকারকে মজুদ ও জোগান পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে। এটাই সরকারের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। পরিস্থিতি অনুযায়ী বেতন বৃদ্ধি এখানে আশার কথা। তবে কাজের ক্ষেত্রে এই বেতন বৃদ্ধির সুফল প্রতিফলিত হোক, সেটাও কাম্য।
No comments:
Post a Comment