Saturday, 14 May 2016

পরিণাম

পূর্ণিমার চাঁদ ডুবে গেছে
তোমার বিদায়ের ক্ষণে
চারদিক ঘোর অন্ধকার
সোনালি দিনের প্রতীক্ষায়
কেটে যাচ্ছে অগণিত রজনি
মহাকালের গলগ্রহ হয়ে আমি
স্মৃতি আঁকড়ে ভাবোদ্দীপক হই
প্রতিটি ক্ষণে-ক্ষণে মৃত্যু হয় আমার

নিয়তি

বিষন্নতার মাঝে জেগে উঠা
জ্যোৎসালোকিত চাঁদ
তেজস্বী সূর্যের আলো
স্বধর্মদ্বেষী হয়ে নিজস্বতা হারায়
অদৃষ্টের এমন নির্মমতায় আশাহত হয় সর্বশুভবাদী যুবক
হারিয়ে যেতে চায় বহুদূরবর্তী স্থানে
যেখানে নেই কোন হতাশা
নেই কোন অপ্রাপ্তির যন্ত্রনা
অদৃশ্যমান শিকলের বেড়ি
মহাযাত্রার পথ গতিরোধ করে
উত্তাল সমুদ্রের বুকে ডিঙ্গি নৌকায়
দোদুল্যমান শুভদর্শী যুবকের নিয়তি

অনুভূতি

দীর্ঘদিন পর তাঁর সাথে কথা হলো
আত্মার সম্পর্ক ;
একদিন কথা না হলে, দেখা না হলে
মনে হয় যেন - একযুগ কথা হয়নি, দেখা হয়নি
শূন্যতা অনুভূত হয়
এমন শূন্যতার নামই
বোধহয় - ভালোবাসা, প্রেম

আমি প্রেমে পড়েছি

আমি প্রেমে পড়েছি 
গভীর অন্ধকারে জ্বলে থাকা একটি ছোট্ট প্রদীপের
যার আলোর শিকায় জ্বলজ্বল করে প্রেয়সীর মুখ
আমি প্রেমে পড়েছি
নীল সমুদ্রের বুকে জেগে উঠা উত্তাল ঢেউয়ের
প্রেয়সীর কলঙ্ক মোচনের জন্য তীব্র বেগে যে তীরে ছুটে আসে
প্রেয়সীর কলঙ্ক মুছে সতীসাধ্বী করে
আমি প্রেমে পড়েছি
সমুদ্রতটে পড়ে থাকা শঙ্খ-ঝিনুকের
প্রিয়ার কানের দুল, হাতের চুড়ি কিংবা গলার মালা হয়ে যে অমরত্ব লাভ করে
আমি প্রেমে পড়েছি
ফাল্গুনি বাতাসে ঝরে পড়া মরা পাতার
প্রেয়সীর নরম পায়ের স্পর্শের জন্য যে গালিচা হয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনে
আমি প্রেমে পড়েছি
বসন্তের কোকিলের
যার কুহূ কুহূ ডাকে প্রেয়সীর হৃদয়ে শূন্যতার ঝড় তোলে
আমি প্রেমে পড়েছি
ঝরে পড়া শিউলির, ছোট্ট বকুলের
প্রিয়ার চুলের খোঁপা হয়ে যে সুঘ্রাণ ছড়ায়
আমি প্রেমে পড়েছি
ভোরের গানের পাখির
যাদের কিচিরমিচির ডাকে প্রেয়সী নতুন সূর্যের আহবানে সাড়া দেয়
আমি প্রেমে পড়েছি
গভীর অরণ্যে খড়ের তৈরি এক ছোট্ট কুঠিরের
প্রত্যহ সন্ধায় প্রেয়সীর হাতে যেখানে সন্ধা প্রদীপ জ্বলে

বন্দনা

তুমি রবে সন্দীপনে
নিভৃতে হৃদয় মাঝে
অনন্তকাল
মানুষ না, দেবী হয়ে
প্রভাতের রক্তিম সূর্য প্রত্যহ প্রণাম জানাবে
রক্ত জবা ফুটে থাকবে তোমার পদস্পর্শের অপেক্ষায়
সধবা' হাতের সিঁদুরে রাঙা হবে তোমার ললাট
আশাহত প্রেমিকের দল নতমস্তকে মাল্যদান করে
উচ্চস্বরে গাইবে তোমার স্তুতিগান
বর হিসেবে চাইবে - পরজন্মে যেন তুমি প্রেয়সী হও

সর্বগ্রাসী

চারদিকে যেন শুধু সর্বগ্রাসীদের বিচরণ!
উদর পূর্তির পরও এরা তৃপ্তিহীন
ওরা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে জানে না
ওদের আরও চাই
দিনরাত্রি ওরা শুধু কা-কা করে বেড়ায়
সুযোগে অন্যের অধিকার হরণ করে
ব্যক্তিস্বার্থে স্ব-জাতির রক্তে নিজদেহ রজ্জিত করে
সবকিছু গ্রাস করে সবকিছু ভোগ করেও  ওরা নাকি সর্বহারা!
ওরা নাকি অনাহারী বঞ্চিতের দলে !
ভুখাদের মত ওদের আচরণ
সর্বগ্রাসীদের লোভ লালসা বিস্বাদ করে তুলছে শিষ্টদের বেঁচে থাকার স্বাদ
সবই যেন সর্বগ্রাসীদের দখলে, সবই যেন সর্বগ্রাসীদের বে-দখলে

শূন্যতা

দীর্ঘশ্বাসে ঝড়ে পড়েছে প্রকৃতির সৌন্দর্য।
নগ্নদেহ নিয়ে বিষাদের সাক্ষী হয়ে
দাঁড়িয়ে আছে শতবর্ষী বৃক্ষ।
সমস্ত শরীর তাঁর ক্ষত বিক্ষত।
প্রভাতের গানের পাখি এখানে -
আড্ডায় মেতে উঠে না।
কিচিরমিচির ডাকে সুর তোলে না।
সন্ধার ক্লান্ত পাখি নীড় বাঁধে না।
চৈত্রের দুপুরের ঘর্মাক্ত পথচারী
প্রশান্তির আশায় ছায়া খোঁজে না।
কেবলই শূন্যতা,শূন্যতা আর শূন্যতা ।

‘রুখবই মাদকের থাবা’

ধনাঢ্য পরিবারের মা-বাবার আদরের ছেলে রাফি (ছদ্মনাম) পড়াশোনা আর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েই কাটত তার দিন বন্ধুদের অনেকেই নেশা করে কিন্তু রাফি একদম বিপরীত বন্ধুদের পীড়াপীড়িতে স্রেফ কৌতূহলবশত একদিন ঢুকে পড়ে নেশার জগতে এর পর থেকে তাকে আর জোর করতে হয়নি এখন মাদকজাতীয় এমন কোনো নেশাদ্রব্য নেই, যা সে গ্রহণ করে না পুরোদস্তুর নেশাগ্রস্ত এখন রাফি আমাদের দেশে রাফির মতো অনেকেই এভাবে স্রেফ কৌতূহলের ছলে, সঙ্গদোষে নিজের অজান্তেই ঢুকে পড়ছে সর্বগ্রাসী মাদকের রাজ্যে আর এভাবেই ধ্বংস হচ্ছে দেশের সম্ভাবনা হারিয়ে যাচ্ছে তরুণ প্রজন্মের উল্লেখযোগ্য অংশের জীবনীশক্তি সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে ঘরে ঘরে সচেতনতা সৃষ্টি করা ছাড়া অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় নেই
মাদকের ভয়াবহতা নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নানা আয়োজন করছে কালের কণ্ঠ শুভসংঘ
মাদককে না বলুন, সুন্দর জীবন গড়ে তুলুন’-স্লোগানে ১৭ নভেম্বর মঙ্গলবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা শুভসংঘের আয়োজনে একটি মাদকবিরোধী শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে পাদদেশে মাদকবিরোধী শোভাযাত্রার আগে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাদের বক্তব্যে ওঠে আসে মাদকের ভয়াবহতার চিত্র
সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের শিক্ষক ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘মাদককে রুখতে দুটি উপায় অবলম্বন করা যায়। একটি হচ্ছে নিজেদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা। আর অন্যটি হচ্ছে আইনের প্রয়োগ দ্বারা বাধ্য করা। নিজেরা যখন সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যর্থ হব, তখন যথাযথ কর্তৃপক্ষ কঠোর আইনের প্রয়োগ করবে। এই দুটির সমন্বয়ে মাদককে রোখা সম্ভব।
বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আহসান ইমাম বলেন, ‘মাদক সুন্দর একেকটি স্বপ্নকে নষ্ট করে দেয়। মাদকের ভয়াল থাবায় অঙ্কুরে বিনষ্ট হচ্ছে শত-সহস্র লালিত স্বপ্ন। মাদকের ভয়াল থাবা থেকে মুক্তির সবচেয়ে সুন্দরতম পথ হচ্ছে ব্যক্তিসচেতনতা। নিজে মাদক গ্রহণ করব না, অন্যকেও মাদক গ্রহণে নিরুৎসাহিত করব। সুন্দর একটি ভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষেত্রে এর বিকল্প নেই।
মাদককে জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে সামাজিক সংগঠন ফিজিক্যালি-চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (পিডিএফ) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মোহাম্মদ কাউছার হামিদ বলেন, ‘হতাশাগ্রস্ত মানুষের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি মাদক গ্রহণের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। মাদকের প্রতি কৌতূহলী মনোভাব থেকে অনেকে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। প্রতিটি পরিবারই এখন দারুণভাবে আতঙ্কিত তাদের সন্তান নিয়ে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দেশের যুবসমাজ রক্ষার্থে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। শুধু আইন করেই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। মাদকাসক্তি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন পারিবারিক সামাজিক আন্দোলন।
সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গায় শুভসংঘের মতো এমন উদ্যোগ সবাইকে নিতে হবে।এমনটাই বললেন বিশ্ববিদ্যালয় শুভসংঘের উপদেষ্টা এবং বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মামুন অর রশীদ।  তিনি আরও বলেন, ‘সবার আগে আমাদেরই সচেতন হতে হবে। তারপর আমাদের চারপাশে নজর দিতে হবে। কারণ আমি মাদক গ্রহণ না করলেও যদি আমার চারপাশে মাদকের ছড়াছড়ি থাকে, অন্য কেউ মাদক গ্রহণ করে, তাহলে আমি মাদকের ঝুঁকি থেকে নিরাপদ নই। মাদক আমাদের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র-সবার শত্রু। তাই জনগণের মধ্যে মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি মাদকচক্রের হোতাদের কঠোর হাতে দমন করতে হবে।শুভসংঘ জাবি শাখার সভাপতি ইন্দ্রজিত ভৌমিক বলেন, ‘আগামী দিনের সুস্থ-সুন্দর সুখকর সমাজ গঠনের জন্য মাদকদ্রব্যের ব্যবহার রোধ করতে হবে। মাদকাসক্তির গ্রাস থেকে দেশ জাতিকে রক্ষা করার দায়িত্ব দল-মত-নির্বিশেষে সবার।
সমাবেশে জাবি শুভসংঘের বন্ধুদের পাশাপাশি কালের কণ্ঠের জাবি প্রতিনিধি তানজিদ বসুনিয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। সমাবেশ শেষে ক্যাম্পাসে একটি মাদকবিরোধী শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি  ক্যম্পাসের কয়েকটি সড়ক ঘুরে জাবির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়
আলোচনা ্যালি শেষে এদিন নতুন করে জাবি শুভসংঘে যুক্ত হন জাকিউল ইসলাম, জাহিদ হাসান, শাহিন আহমেদ, আল আমিন কুরাইস, শিমুল মিয়া, রুহুল কুদ্দুস, রেজাউল করিম, তপু সুলতান, সফিকুল ইসলাম সুমন, মো. শেখ রাসেল, আরজু আলম এবং টপি খান প্রমুখ