Wednesday, 30 December 2015

বেতন বৃদ্ধিই কি সব?

বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী প্রায় ১৪ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর বেতন-ভাতা শতভাগ বাড়ানোর সুপারিশ করে প্রতিবেদন ছাপানোর কাজ সম্পন্ন করেছে জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশন। এতে সর্বনিম্ন মূল বেতন (চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের) বর্তমানের ৪ হাজার ১০০ থেকে বাড়িয়ে ৮ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর সর্বোচ্চ বেতন (মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের) বর্তমানের ৪৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করবে বলে জানা যাচ্ছে। বিদ্যমান ২০টি গ্রেডকে ১৬টি গ্রেডে নামিয়ে এনে প্রতিটিতেই কম-বেশি ১০০ শতাংশ বেতন বাড়ানোর সুপারিশ রেখেছে কমিশন। বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ধরা হয়েছে মূল বেতনের ৫ শতাংশ।
আগামী জুলাইয়ে নতুন এ পে-স্কেল কার্যকর হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য নিঃসন্দেহে এটা সুখবর এবং বিষয়টা যৌক্তিকও বটে। কারণ সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেতন-বোনাস নির্ধারণ করা খুবই জরুরি। এছাড়া মানুষের কর্মেও আগ্রহ থাকে না। নতুন পে-স্কেল সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য কতটুকু কল্যাণকর হবে জানি না। তবে স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষের জন্য হবে দুঃসংবাদ, যদি এর প্রভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম নতুন করে বাড়ে। কারণ এমনিতেই দেশে বিভিন্ন জিনিসের দাম অল্প আয়ের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। এর পর যদি নতুন করে মূল্যস্ফীতি ঘটে, তা হবে সাধারণ মানুষের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক প্রকাশিত এক তথ্যে দেখা যাচ্ছে, দেশে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হার ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ। আর কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সম্প্রতি প্রকাশিত জরিপের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত এক বছরে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ১১ শতাংশ। সুতরাং মূল্যস্ফীতির বিষয়টা একেবারে অবহেলা করা যাচ্ছে না। অতীতে যখনই নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তখনই তার প্রভাবে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে।
বেতন বৃদ্ধির কথা শুনলেই যেন আমাদের দেশে বাড়িভাড়া থেকে শুরু করে সব প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম জ্যামিতিক হারে বাড়ে! নতুন পে-স্কেলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে যদি বাজারে অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে, তাহলে স্বল্প আয়ের মানুষের যেমন কষ্ট বাড়বে, তেমনি বেতন বৃদ্ধির সুফল থেকে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বঞ্চিত হবেন। তাদের জীবনযাত্রার মানে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে না। সুতরাং নতুন বেতন কাঠামো অর্থনীতিতে যাতে উচ্চমূল্যস্ফীতির সম্ভাবনা তৈরি করতে না পারে, সরকারকে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। দেশের পোশাক শিল্পসহ বেসরকারি ব্যাংক, বীমা ও কলকারখানায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির দাবি সামনে চলে আসতে পারে। শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে জোটবদ্ধ হতে পারেন। এক্ষেত্রে তারা হয়তো আন্দোলন-বিক্ষোভের পথও বেছে নিতে পারেন। সরকারকে এ বিষয়ও বিবেচনায় রাখতে হবে। পাশাপাশি জনগণের জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার মান উন্নত ও নিশ্চিত করতে হবে।
গবেষণায় দেখা গেছে দেশের সরকারি খাতগুলো সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত। ঘুষ ছাড়া যেন এখানে কোনো কাজই হয় না! সরকারি চাকরিজীবীদের দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে আন্তরিকতা ও সততার পরিচয় দিতে হবে। তাদের মনে রাখতে হবে, বর্ধিত বেতনের জোগানদাতা এ দেশের জনগণ। তবে বেতন বাড়ানোর পরও যদি কেউ দুর্নীতি করেন, তাহলে আইনের মাধ্যমে তাদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। উচ্চহারে বেতন নেবেন আবার ঘুষও খাবেন, তা তো হতে পারে না। সর্বোপরি বেতন বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ যাতে না বাড়ে, সেজন্য সরকারকে মজুদ ও জোগান পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে। এটাই সরকারের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। পরিস্থিতি অনুযায়ী বেতন বৃদ্ধি এখানে আশার কথা। তবে কাজের ক্ষেত্রে এই বেতন বৃদ্ধির সুফল প্রতিফলিত হোক, সেটাও কাম্য।

সীমান্তে আবারও হত্যা, কথা রাখেনি বিএসএফ


সীমান্তে হত্যা ও নির্যাতন বন্ধের জন্য ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। প্রতিবারই বিএসএফ বিজিবিকে সীমান্তে হত্যা ও নির্যাতন শূন্যে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর কোন প্রতিফলন নেই। সীমান্তে বিএসএফের অমানবিক-ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ থেমে নেই! বরং দিন দিন যেন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার অচিন্তপুর সীমান্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিএসএফের গুলিতে নজরুল ইসলাম নামে এক বাংলাদেশি কৃষক নিহত এবং সাহাজুল নামে আরেকজন আহত হয়েছেন। অচিন্তপুর সীমান্ত পিলার নং ২৯৫-এর কাছে জমিতে ধানের চারা রোপণ করার সময় ভারতের ৯৬ বিএসএফের ঘুরছি ক্যাম্পের বিএসএফের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে এ ঘটনা ঘটে। হত্যাকা- ঘটানোর পর নিহত নজরুল ইসলামের লাশ বিএসএফ টেনেহিঁচড়ে ভারতের অভ্যন্তরে তারকাঁটার বেড়ার কাছে নিয়ে গেছে।

কিছুদিন আগেও বেনাপোলের পুটখালী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ফারুক ও আলম নামে দুই বাংলাদেশি গরু ব্যবসায়ী নিহত হন। শুধু তাই নয়, আরেকটি উদ্বেগজনক সংবাদ হচ্ছে আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে বিএসএফ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর হামলা চালায়। এ সময় বিএসএফের রাবার বুলেটে বালাটারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর এক ছাত্র আহত হয়। 

বিএসএফ সদস্যদের কেন এমন ঔদ্ধত্য-অমানবিক আচরণের উত্তর আমাদের জানা নাই। তবে তাদের এরূপ আচরণ আমাদের মর্মাহত করে। প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র থেকে আমরা এরূপ আচরণ আশা করি না। সীমান্তে যেন জঙ্গি ও সন্ত্রাসী চক্র এবং অস্ত্র-মাদক ও মানব পাচারকারীরা ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করবে এটা খুবই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে কোন অপরাধী যেন অন্যায় করে পার পেয়ে না যায়, সে ব্যাপারেও উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী সচেতন থাকবে। অন্যায়কারীর শাস্তি হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিএসএফের গুলিতে বারবার বাংলাদেশি নিহতের ঘটনা কিংবা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বাংলাদেশে অভ্যন্তরে বিএসএফের প্রবেশ আমাদের কি বার্তা দেয়?

নিঃসন্দেহে বিএসএফের এরূপ ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ খুবই অপ্রত্যাশিত। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব মতে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে গত বছর ৩৪ বাংলাদেশি হত্যার শিকার হয়েছেন। এ ৩৪ বাংলাদেশির মধ্যে বিএসএফের সরাসরি গুলিতে ১৭ জন এবং নির্যাতনের মাধ্যমে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আসকের মতে, ২০১৩ সালে বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছে ৩৮ বাংলাদেশি। এর আগের বছর ২০১২ সালে নিহত হয়েছে ৩৬ জন। সীমান্তের কাঁটাতারের কাছেই কোনো বাংলাদেশি নাগরিক তাদের প্রয়োজনে গেলেই বিএসএফ হয় গুলি করে, না হয় তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে। অজুহাত হিসেবে সর্বদাই চোরাচালানের বিষয়টা তুলে ধরার চেষ্টা করে।

প্রশ্ন হচ্ছে চোরাচালানের সঙ্গে কি শুধু বাংলাদেশি নাগরিকই জড়িত? বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন কথা বলে। সীমান্তে চোরাচালানের সঙ্গে দুই দেশের মানুষের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এমনকি অনেক বিএসএফ সদস্যের বিরুদ্ধেও এ অভিযোগ আছে বলে জানা যায়। তাহলে সীমান্তে কেন বারবার বাংলাদেশি জনগণ এ ধরনের নির্মম ও নৃশংস হত্যাকা-ের শিকার হবে? কোন বাংলাদেশি অবৈধভাবে ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে প্রবেশ করলে বিএসএফ তাদের আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করতে পারে। প্রচলিত আইনে তাদের বিচার করতে পারে। কিন্তু গুলি বা নির্যাতন করে হত্যা করতে পারে না। কোন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র কখনোই তার বেসামরিক নিরীহ নাগরিকদের এমন নির্বিচার হত্যা, নির্যাতন কিংবা অপহরণ মেনে নিতে পারে না। 

ভারত দীর্ঘদিন ধরে সমঝোতা চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে বিনা উস্কানিতে একের পর এক সীমান্তে বেসামরিক নাগরিক হত্যা করছে। এসব হত্যাকা- ও নির্যাতন নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। দুঃখজনক এসব হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচারও হয় না। ফলশ্রুতিতে বেড়েই চলছে নির্যাতন ও হত্যাকা-ের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কোন্নয়নে সীমান্তে হত্যা একটি অন্যতম বড় বাধা। ভারতের মতো একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে আমরা কখনোই এরূপ ব্যবহার আশা করি না। আশা করি বিএসএফের ঔদ্ধত্য-অমানবিক আচরণ বন্ধ হবে। প্রতিষ্ঠিত হবে দুই দেশের মধ্যে সত্যিকারের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।

নতুন পে-স্কেল যেন মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি না করে

সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য সর্বোচ্চ ৮০ হাজার ও সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২০০ টাকা মূল বেতন ধরে নতুন বেতন কাঠামো সুপারিশ করছে জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশন। এই বেতন বৃদ্ধি ছাড়াও কমিশন সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য স্বাস্থ্য ও জীবন বীমা বাধ্যতামূলক করা, পেনশনের হার বাড়ানো এবং কল্যাণ তহবিলের সংস্কার, বাড়ি নির্মাণ ও গাড়ি কেনার জন্য অধিক সুবিধা সৃষ্টিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার জন্য সুপারিশ করেছে সরকারের কাছে। এছাড়া প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোতে (স্কেল) ২০টি স্তরের (গ্রেডের) পরিবর্তে ১৬টি স্তর রাখা হয়েছে এবং আগের সরকারি বেতন স্কেলগুলো চার বছর মেয়াদের জন্য করা হলেও নতুন এই স্কেল হবে ছয় বছরের জন্য। এ গ্রেডে আগের তুলনায় বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণ।

সমকালীন বিচ্ছিন্ন ঘটনা, জাগরণ আসুক এখনই

জাতিসংঘের ৭০তম সাধারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণ শেষে দেশের জন্য বিরল সম্মান বয়ে এনে প্রায় এক সপ্তাহ পর দেশে ফিরেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। সফরকালীন তিনি জাতিসংঘ সদর দপ্তরে শান্তিরক্ষাবিষয়ক সম্মেলনে, টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নবিষয়ক আলোচনা সভায়, দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা বিষয়ে গোলটেবিল আলোচনায়, লিঙ্গসমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে বিশ্বনেতাদের এক বৈঠকে এবং এমডিজি ও এসডিজিবিষয়ক এক উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় বক্তব্য রেখেছেন। এ সময় তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেও অংশ নিয়েছেন। এ বছর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বিচক্ষণ নেতৃত্বেরস্বীকৃতি হিসেবে জাতিসংঘের চ্যাম্পিয়নস অব দি আর্থএবং তথ্যপ্রযুক্তিতে অগ্রগতির স্বীকৃতি হিসেবে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সংস্থা (আইটিইউ) বাংলাদেশকে আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’-এ ভূষিত করেছে। আমাদের জন্য এটা নিঃসন্দেহে গর্বের ও মর্যাদার। দেশের জন্য বিরল এ সম্মান বয়ে আনার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাই।
বিশ্বের বুকে যখনই বাংলাদেশের নাম ইতিবাচক কোনো কারণে উচ্চারিত হয়, তখন সত্যিই গর্বে বুক ফুলে ওঠে। খুশিতে ও অহংকারে চোখে জল চলে আসে। কিন্তু যখন গণমাধ্যমে দেখি, তাজরীনে আগুনে পুড়ে শ্রমিক দগ্ধ হয়েছে, আইন অমান্য করে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত রানা প্লাজা ধসে হাজারের বেশি শ্রমিকের করুণ মৃত্যু হয়েছে, সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মায়ের গর্ভে সুরাইয়া গুলিবিদ্ধ হয়েছে, টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে ছেলের সামনে মা ধর্ষণের শিকার হয়েছে এবং ধর্ষকের বিচার চেয়ে এলাকাবাসী পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে, প্রতিহিংসার শিকার হয়ে ত্বকী, রাজন ও রাকিবের মতো শিশুরা অকালে প্রাণ হারাচ্ছে, নিরপরাধ দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎকে কেউ দিনদুপুরে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে, সাংসদের ছোড়া গুলিতে রক্তাক্ত হয়ে কোনো নিরপরাধ শিশু হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে, রাষ্ট্রের ব্যর্থতার কারণে আমাদের দেশে এসে বিদেশি কোনো নাগরিক খুন হয়েছেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাঠিয়াল বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে, দেশে ক্রমাগত খুন-গুম-অপহরণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন সত্যিই খুব হতাশ হই। দেশের সব অর্জন যেন নিমেষেই চোখের সামনে ম্লান হয়ে যায়। তখন অতি দুঃখে, লজ্জায় ও ক্ষোভে প্রিয় কবি নবারুণ ভট্টাচার্যের মতো বলতে ইচ্ছা হয়, ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না।তবে এসব ঘটনার জন্য রাষ্ট্র যে এককভাবে দায়ী তা কিন্তু নয়; আমাদের নৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় অবক্ষয়ও অনেকাংশে দায়ী। অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত এসব ঘটনা ঘটার পর মিডিয়া কয়েক দিন ফলোআপ করে, মানুষ কিছুদিনের জন্য সোচ্চার হয়ে ওঠে। কিছুদিন পর যেন সব স্বাভাবিক! আবার নতুন অপরাধ সংঘটিত হয়। এভাবেই চলছে স্বদেশ।
বর্তমানে মিডিয়াপাড়ার হট কেক বিদেশি নাগরিক হত্যা। ইতালির নাগরিক চেসারে তাভেলা হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই রংপুরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হলেন জাপানের নাগরিক হোশি কুনিও। কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রায় একই কায়দায় এ দুজন বিদেশি নাগরিক খুনের শিকার হয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) টুইট করে এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে। একই সঙ্গে সন্ত্রাসী সংগঠনটি এ ধরনের আরো হামলার হুমকি দিয়েছে। সন্ত্রাসী সংগঠন থেকে এ ধরনের হুমকি আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগজনক। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অধিকাংশ মোড়ল রাষ্ট্র বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে। যদিও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জঙ্গি তৎপরতার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ইতালির নাগরিক তাভেলা হত্যার ঘটনাটি অনেকের কাছে বিচ্ছিন্ন বলে মনে হলেও সপ্তাহ পার না হতে প্রায় একই কায়দায় জাপানের নাগরিক হোশি কুনিও হত্যাকাণ্ড জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এ অবস্থায় প্রশ্ন হতেই পারে, আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ কি তাহলে দিন দিন জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হচ্ছে?
রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের তৎপরতার বিষয়টি অগ্রাহ্য করা হলেও সন্ত্রাসী সংগঠন আইএসের হুমকি এবং পরপর প্রায় একই কায়দায় দুজন বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনা আমাদের স্বাধীন দেশের সম্মান, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অতিদ্রুত এ হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য খুঁজে বের করতে হবে। জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করত হবে। বিশ্বের কাছে প্রমাণ করতে হবে, শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ কোনো জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের রাষ্ট্র নয়।
স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের জন্য বিশ্বের যেসব দেশ সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছিল, জাপান তাদের মধ্যে অন্যতম। এ ছাড়া স্বাধীনতা প্রাপ্তির কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় জাপান। সুতরাং জাপান যে বাংলাদেশের সত্যিকারের বন্ধুরাষ্ট্র, সে বিষয়ে সন্দেহ থাকার কথা নয়। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের প্রধান দাতা দেশের ভূমিকা পালন করছে সূর্যোদয়ের দেশ জাপান। সুতরাং জাপানি নাগরিকের হত্যার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় আনতে হবে, যাতে এ হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে দুই দেশের সম্পর্কে চির না ধরে। হোশি কুনিও একজন সামান্য আলু ব্যবসায়ীএ ধরনের বক্তব্য সমস্যার সমাধান না করে বরং নতুন সংকটের সৃষ্টি করবে। এরই মধ্যে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে গেছে। বিশ্ব মিডিয়া ফলাও করে নেতিবাচক এসব ঘটনা প্রচার করছে। বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। কিছু দূতাবাস তাদের নাগরিকদের চলাচলের ওপর সতর্কতা জারি করেছে। তৈরি পোশাকের কিছু ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ সফর বাতিল করেছেন। এমনকি আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেও অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ী বাংলাদেশে আসবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ীদের। এই হত্যাকাণ্ড থেকে একটা বড় ধরনের হ-য-র-ল-ব অবস্থা সৃষ্টির আগেই সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ শুধু বিদেশের মাটিতে ইমেজ সংকটেই পড়বে না, দেশের অর্থনীতিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মেধাই হোক ভর্তির একমাত্র মানদণ্ড

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার অদূরে অপরূপ নৈসর্গিক পরিবেশের মাঝে অবস্থিত দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা অর্জনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে জাবি দেশের অধিকাংশ মেধাবী শিক্ষার্থীর পছন্দের তালিকায় প্রথমদিকেই থাকে। মেধাবীদের অনেকেই জাবির শিক্ষার্থী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। যে সকল শিক্ষার্থী  স্বল্প আসনের বিপরীতে তীব্র প্রতিযোগিতা

শিশু হত্যা বন্ধ করুন

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিশু অপহরণ, হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনসহ এমন বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনার সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। এসব ঘটনায় মানুষরূপী নরপশুদের পৈশাচিক ও বর্বরোচিত হামলায় একের পর এক অকালে ঝরে যাচ্ছে আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। নরপশুদের হিংস্রতা থেকে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র কেউ-ই তাদের রক্ষা করতে পারছে না! এসব লোমহর্ষক ঘটনা নতুন নয়। এগুলো বছরের পর বছর ধরে আমাদের সমাজে চলে আসছে। প্রচারমাধ্যমের অভাবে এগুলো আগে আমাদের অজানা থাকত। কিন্তু বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন ও মিডিয়ার কল্যাণে মুহূর্তের মধ্যেই ঘরে বসেই আমরা এসব ঘটনা জানতে পারি। গত মাসে সিলেটে চুরির অভিযোগে মো. সামিউল আলম ওরফে রাজন নামে এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করে মানুষরূপী কিছু জানোয়ার। নরঘাতকের দল ঠা-া মাথায় রাজনকে নির্যাতন করে হত্যা করে। তারপর হত্যাকা-ের সেই দৃশ্য ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়। ঘাতকদের পৈশাচিকতায় যতটুকু না অবাক হয়েছি তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছি তাদের এমন দুঃসাহসে। নৃশংস এ ঘটনার বিচার দাবিতে ফুঁসে ওঠে দেশের বিবেকবান প্রতিটি মানুষ। স্থানীয় জনতা অপরাধীদের ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করে। এ ঘটনার বিচার শেষ না হতেই রাকিব নামে এক শিশু নির্যাতনের শিকার হয়। নির্যাতনের এক পর্যায়ে মোটরসাইকেলে হাওয়া দেয়ার যন্ত্রের নল রাকিবের মলদ্বার দিয়ে প্রবেশ করিয়ে বাতাস ছেড়ে দেয় মানুষরূপী কিছু জানোয়ার। ওই যন্ত্রের মাধ্যমে রাকিবের মলদ্বার দিয়ে প্রচ- বেগে হাওয়া প্রবেশ করানো যা সে এক পর্যায়ে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করে। কী বীভৎসতা! হায়রে মনুষ্যত্ব! শিশু রাকিবকে যে কায়দায় হত্যা করা হয়েছে তা সত্যিই অকল্পনীয়। ভাবলেই শরীরের পশম খাড়া হয়ে ওঠে। মানুষ হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেও ঘৃণা হয়। মানুষ কিভাবে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে? এ ঘটনার রেশ না কাটতেই রবিউল নামের আরেক শিশু নির্মমতার শিকার হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানতে পারলাম বরগুনার তালতলী থানার এক গ্রামে মাছ চুরির অভিযোগে ১১ বছর বয়সী এ শিশুটিকে তার এক প্রতিবেশী পিটিয়ে হত্যা করে পুকুরে লাশ ফেলে দিয়েছে সর্বশেষ মাদারীপুরে সুমাইয়া ও হ্যাপি নামে দুই স্কুলছাত্রী নির্যাতনের শিকার হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিল। পরিবারের অভিযোগ, ধর্ষণের পর তাদের হত্যা করা হয়েছে। এমন পৈশাচিকতা ও নিষ্ঠুরতার মধ্যেই আমাদের বসবাস! মানবিক মূল্যবোধের এ কেমন অবক্ষয়! সভ্যযুগে এ কেমন অসভ্যতা! এমন অধঃপতিত ও অবক্ষয়যুক্ত সমাজ তো আমাদের কাম্য নয়। দিনদিন শিশুর প্রতি যে সহিংসতা এবং নির্মমতা বাড়ছে একথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে নির্যাতিত শিশুদের প্রায় সবাই-ই নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। যে বয়সে তাদের স্কুলে যাওয়ার কথা, বন্ধুদের সঙ্গে হই-হুল্লোড় করে সময় কাটানোর কথা সেই বয়সে রাজন, রাকিবের মতো শিশুরা জীবিকার প্রয়োজনে সবজি বিক্রি করে, গ্যারেজে কাজ করে। রাষ্ট্র এসব শিশুর মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি। অবহেলা, বঞ্চনা, নির্যাতনের মধ্যেই এদের বেড়ে ওঠা। এই ব্যর্থতা শুধু রাষ্ট্রের নয়; আমার, আপনার অর্থাৎ আমাদের। সব অধিকার কেড়ে নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমরা যেন ওদের বেঁচে থাকার অধিকার টুকুও কেড়ে নিচ্ছি! বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন অনুযায়ী খুন, ধর্ষণ ও অপহরণসহ নানাভাবে গত ছয় মাসে প্রায় তিন হাজার শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ৬ মাসে ১৫৪ শিশুকে হত্যা করা হয়, ধর্ষিত হয়েছে ২৩০ শিশু। ১২৭ শিশু হয়েছে অপহরণের শিকার। অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৩ শিশুকে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে আরো ১৭ শিশুকে। প্রতিবেদন অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত হত্যা করা হয়েছে ৬৬ শিশুকে। অন্যদিকে পরের তিন মাসে হত্যার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৮ জনে। এভাবে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয় ৯৬ জন, যা পরের তিন মাসে বেড়ে দাঁড়ায় ১৩৪। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে অপহরণের শিকার হয় ৪১ শিশু, যা পরের তিন মাসে হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। কিন্তু মানবিক মূল্যবোধের কেন এমন অবক্ষয়? কেন এমন পৈশাচিকতা? কেন দিনদিন এসব অপ্রত্যাশিত ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে? বিচারহীনতার সংস্কৃতি, বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, সুশিক্ষার অভাব, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, প্রশাসনের ওপর রাজনৈতিক প্রভাবসহ বিভিন্ন কারণে শিশু অপহরণ, হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনসহ নানাবিধ সন্ত্রাসী কর্মকা- দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমরা সুন্দর একটি পৃথিবী উপহার দিতে পারছি না। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। নিজেদের স্বার্থে হলেও আমাদের এই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের একটু আন্তরিকতা ও সচেতনতা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মতৎপরতা, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই দিতে পারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সুস্থ ও বাসযোগ্য বাংলাদেশের নিশ্চিয়তা। তাই আসুন কবি সুকান্তের মতো আমরাও অঙ্গীকার করি 'এ বিশ্বকে এ-শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।

সিরিয়া সংকট: উত্তপ্ত বিশ্বরাজনীতি

ইউক্রেনের ক্রাইমিয়াকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকা ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের সম্পর্ক এমনিতেই শীতল। নতুন করে সিরিয়া ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিশ্বের পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র