Saturday, 9 December 2017

জিম্বাবুয়ের সামরিক অভ্যুত্থান ও রবার্ট মুগাবের পতন


রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে আফ্রিকার দক্ষিণ অংশে অবস্থিত জিম্বাবুয়ে এখন বিশ্ব মিডিয়ার আলোচনার বিষয়বস্তু। রক্তপাতহীন এক সামরিক ‘অভ্যুত্থানের’ মধ্য দিয়ে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনাবাহিনী। তারা প্রেসিডেন্ট মুগাবেকে গৃহবন্দী করে ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিয়ে নিয়েছে। যদিও সেনাবাহিনীর দাবি, এটা কোন সামরিক অভ্যুত্থান না। তাদের দাবি, রবার্ট মুগাবেকে ঘিরে থাকা অপরাধীদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান। অভিযান শেষে স্থিতাবস্থা ফিরে এলে তারা নির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবে। সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন এমনাংগাগোয়াকে বরখাস্ত করলে এই রাজনৈতিক সংকটের সূচনা হয়।
এমারসন এমনাংগাগোয়া ষাটের দশক থেকে মুগাবের বিশ্বস্ত সহযোগী। জানু-পিএফ দলে ও সরকারে তিনি দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি দেশটির মন্ত্রী ও উপ-রাষ্ট্রপতি ছিলেন।
৯৩ বছর বয়সী মুগাবের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকলে ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন এমনাংগাগোয়াকে তার সম্ভাব্য উত্তরসূরি মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু সবাইকে অবাক করে প্রেসিডেন্ট মুগাবে নিজের অবর্তমানে স্ত্রী গ্রেস মুগাবেকে উত্তরসূরি ঘোষণা করেন। প্রেসিডেন্ট মুগাবের এমন একচ্ছত্র সিদ্ধান্ত তার নিজের দলের সদস্যদের মধ্যেও অসন্তোষ জন্ম দিয়েছে। এ থেকে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক টানাপড়েন। গ্রেসের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন এমনাংগাগোয়ার সমর্থনে ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ পার্টি দুই ভাগ হয়ে পড়েছে। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে মুগাবে স্ত্রীর পক্ষে এমারসন এমনাংগাগোয়াকে
বরখাস্ত করলে সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। এমারসনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জিম্বাবুয়ের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল কনস্টান্টিনো চিওয়াঙ্গা বিষয়টি ভালোভাবে নেননি। এরপরই হয় রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থান।
স্বাধীনতা পূর্বে জিম্বাবুয়ে ব্রিটেনের উপনিবেশ ছিল। ১৯৬৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত স্বাধীন জিম্বাবুয়ের দাবিতে জিম্বাবুয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়। দেশটি ১৯৮০ সালে ল্যাংকাস্টার হাউস এগ্রিমেন্টের মাধ্যমে অবশেষে স্বাধীন হয়। ১৯৮০ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে মুগাবে জিম্বাবুয়ের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৭০-এর দশকের গেরিলাযুদ্ধের মাধ্যমে মুগাবের নাম ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় জনগণের চোখে তিনি বিপ্লবী ও বীরের মর্যাদা লাভ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে রবার্ট মুগাবের গৃহীত একের পর এক বিতর্কিত পদক্ষেপ জনমনে অসন্তোষ জন্ম দেয়। ২০০০ সালে তিনি বিতর্কিত ভূমি সংস্কার জারি করেন। এ সময় তিনি আগ্রাসীভাবে চার হাজারেরও বেশি শ্বেতাঙ্গ কৃষকের কাছ থেকে উর্বর জমি কেড়ে নিয়ে রাজনৈতিক মিত্র ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছে এসব জমি বিতরণ করেন, যাদের কৃষিকাজ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না। ফলে দেশটির অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ কৃষি খাত প্রায় ধসে পড়ে। রিজার্ভ ব্যাংক অব জিম্বাবুয়ে অতি মূল্যস্ফীতির ভারে একক মুদ্রা ব্যবস্থার পরিবর্তে বাধ্য হয়ে বহু মুদ্রাভিত্তিক মুদ্রানীতি গ্রহণ করে। অর্থনৈতিক সংকট, বেকারত্ব, অপুষ্টি, দরিদ্রতা প্রভৃতি কারণে জিম্বাবুয়ের জনগণের কাছে যে মুগাবে একসময়ে উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে একজন জাতীয়তাবাদী যোদ্ধা হিসেবে প্রশংসিত ছিলেন, সময়ের আবর্তে তিনিই এখন ভিলেন। জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়ক জনবিচ্ছিন্ন রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হয়েছেন। এ সত্ত্বেও মুগাবের অতীতের অবদানের কারণে কৃতজ্ঞতাবশত আফ্রিকার বেশিরভাগ নেতা তার সমালোচনা থেকে বিরত থেকেছেন। কিন্তু এবার আর তার শেষ রক্ষা হলো না।
সহজেই অনুমেয় রবার্ট মুগাবে এখন খুব খারাপ সময় কাটাচ্ছেন। তারই ক্ষমতাসীন দল তার ওপর ‘অনাস্থা’ এনে তাকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছে। হারারের রাস্তায় তার বিরুদ্ধে জনগণ ব্যাপক বিক্ষোভ করছে। জনগণ সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণকে মিছিলে স্বাগতম জানাচ্ছে। স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছে, জিম্বাবুয়ের জনগণ মুগাবের অপশাসন থেকে মুক্তি চায়। রবার্ট মুগাবের দীর্ঘদিনের মিত্র চীন। স্বৈরাচারী শাসন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখেও চীন মুগাবেকে সমর্থন করে গেছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তি যখন মুগাবের সরকারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে তখন চীন তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে মুগাবে সরকারের প্রতি চীনের কি ভূমিকা হবে তা বলা বেশ মুশকিল।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে অভ্যন্তরীণ অরাজকতা নিরসন করে, অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করে বিভাজিত রাজনৈতিক দল ও জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে আশ্বাস দেয়া হচ্ছে তা খুব চ্যালেঞ্জিং। কারণ দেশটিতে ৯০ শতাংশের বেশি বেকার। এখন পর্যন্ত দেশটির কোন জাতীয় মুদ্রা নেই। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পূর্বশর্ত। সুতরাং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশটির অর্থনীতি সুদৃঢ় করতে হবে। সেনাবাহিনী যদি বিদ্যমান সমস্যা সমাধান করে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারে তাহলে মুগাবের পতনের মধ্যদিয়ে দেশটিকে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হবে। এখন দেখার বিষয় পরিস্থিতি কতদিনে স্বাভাবিক হয়, নাকি পরিস্থিতির অবনতি হয়ে আফ্রিকার এ দেশটি গৃহযুদ্ধে জড়াবে।
বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর ২০১৭

State’s responsibility and minority question


We have achieved great honour as a country of communal harmony. For thousands of years the people of this land have been living in harmony. There are many evidences to stand to prove this communal harmony. People in this land stand beside each other in the face of danger by ignoring the religious identity. But due to the political turmoil and social deprivation this bond of social harmony is going to extinct day by day. 
There are unrests among people nowadays and they are hurting one another physically or mentally with or without any reasons. The society and the nation are experiencing negative effects of the deprivation of values.
On a complaint related to a Facebook status regarding religious humiliation, the fanatic groups massacred Hindu homes in the village of Thakurbari in Paglapir of Sadar upazila of Rangpur district. About 30 Hindu homes of the village have been damaged by the fire of extremists. 
Hundreds of Hindu families are facing security threats there. This is a nude game of communal violence in the name of protecting religion. The attacks on the minority's houses and shops are not new. There are many complaints regarding forced land grabbing of the minority communities. The people of the minority communities of our country are victims of the violence and torture without any significant reasons. 
On September 29, 2012 some lunatics attacked a Buddhist monastery at Ramu in Cox's Bazar. The ardent fanatical groups set fire to the Ramu's 12 ancient Buddhist monasteries and 32 homesteads. At that time, more than six Buddhist monasteries and hundreds of houses were vandalized and looted. 
The similar incident took place in the other settlement and Buddhist monasteries of Ukhia-Teknaf on the following day. In October 28, 2016 the same allegations were made against the Hindu community of the Brahmanbaria's Nasirnagar upazila, and more than 100 families of the Hindu community of that area were being attacked. The miscreants vandalized their houses and temples. 
Why such a series of attacks are happening against the minorities based on these false allegations? The State certainly cannot deny the liability of these actions. If anyone is guilty of putting status on the Facebook, he must be prosecuted in the court, but attacking certain community is an injustice?
Are minorities not the citizens of this State? It is the state responsibility to protect the minorities. People those who were genuinely guilty in the cases of Ramu, Ukhia and Nasrinagar, bring them under justice so that such incidents never repeat again. 
Take the example of election. In our context, election means a dangerous time for the minority community. The people of the minority Hindu community are the major victims of widespread violence during the time of the election. Many times, they are tortured for simply voting.
The main spirit of our great liberation war was to build a non-communal and exploitation-free State. But even after so many years of independence, the dream is not well established. 
As a result, incidents of communal violence in the country are increasing day by day. Many families are leaving the country quietly due to the lack of security. Statistics show that in the four decades of the independence, the population has doubled in the country, but in reality the number of religious minorities decreased. 
Since the assassination of the Father of the Nation Sheikh Mujibur Rahman, minorities started to leave this country. That trend is still going on. The rate of the minority population in Bangladesh was around 20-21 per cent during the independence. But now this rate is around 9.7 per cent, according to the available data.
Before the next national election, extremist militant groups are trying to be active to create a confidence crisis by destroying the communal harmony. Everyone will have to stand against this evil power at any cost. In order to ensure punishment of these evil works court should not consider the political identity of those criminals. Those who are involved in these misdeeds are the enemy of the State. The court must ensure exemplary punishment for them. 
We must bear in mind that Bangladesh was born as a country for all not for Muslims or for Hindus. As a country of communal harmony, there is no alternative to stop minority oppressions. In order to do so the State should play a proactive role.

Sunday, 19 November 2017

উত্তরাঞ্চলের বন্যা ও নদীশাসন


‘রাইসর্ষের ক্ষেত সকালে উজ্জ্বল হলো- দুপুরে বিবর্ণ হয়ে গেল
তারই পাশে নদী;
নদী, তুমি কোন্ কথা কও?
অশথের ডালপালা তোমার বুকের ’পরে পড়েছে যে,
জামের ছায়ায় তুমি নীল হলে,
আরও দূরে চলে যাই
সেই শব্দ পিছে পিছে আসে;
নদী নাকি?
নদী, তুমি কোন্ কথা কও?’
রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ নদী নিয়ে যেমন রোমান্টিকতায় ভুগেছেন তার বিপরীত চিত্রও বোধকরি কম নেই বাংলাদেশকে ঘিরে। কবি ও কবিতার বাইরে আমাদের জীবন, সাহিত্য, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির সর্বস্তরে নদ-নদীর প্রভাব রয়েছে। নদ-নদীর কারণেই আমাদের দেশ সুজলা-সুফলা ও শস্য-শ্যামলা। ইতিহাসের সুদূর অতীত থেকে পৃথিবীতে যত আলোচিত প্রাচীন সভ্যতা রয়েছে তার সবই ছিল নদীকেন্দ্রিক। নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে সহগ্র নগর ও বন্দর। বস্তুত মানবসভ্যতা নদীর কাছে যারপরনাই ঋণী। আমাদের দেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর হওয়ার কারণে এদেশের অধিকাংশ মানুষের জীবিকা অনেকাংশে নদীর ওপর নির্ভরশীল। দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ সরাসরি কৃষিকাজে যুক্ত। অনেকে আবার মৎস চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। দেশের চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনীয় সেচের পানির প্রধান উৎস হিসেবে নদ-নদীগুলোর ভূমিকা অনস্বীকার্য। আঁকাবাঁকা সর্পিল নদীগুলো এদেশের ও দেশের মানুষের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের অবহেলায়, উদাসীনতায়, অপরিচর্যায় ও প্রয়োজনীয় নদী শাসনের অভাবে আমাদের মূল্যবান সম্পদ নদীগুলো ক্রমেই শুকিয়ে মৃত খাল ও মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। নদীগুলো হারিয়ে ফেলছে স্ববৈশিষ্ট্য। উজানের দেশ ভারতের অবিবেচনাপ্রসূত পানি প্রত্যাহার এবং যথাযথ নদী শাসনের অভাবে নদীপথের পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে বর্ষাকালীন সময়ে ভয়াবহ নদী ভাঙনের তীব্রতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রতিবছর নদীর তীরভাঙন ও নিয়মিত বন্যা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলার পাশাপাশি জনগণের জন্য সৃষ্টি করছে অপরিমেয় দুঃখকষ্ট। মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয় দেশের চলমান উন্নয়ন।
বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে বহুকাল ধরেই আমাদের বসবাস। প্রায় প্রতিবছরই এদেশের বিভিন্ন অঞ্চল, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো বন্যার কারণে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশের এ অঞ্চল প্রায় প্রতিবছরই বন্যাকবলিত হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে বন্যা যেন এ অঞ্চলের মানুষের নিত্যসঙ্গী! এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি আগস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বন্যা শুরুর মৌসুম হিসেবে ধরা হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিগত কয়েক বছর ধরে মোটামুটি এপ্রিলের শুরুতেই বন্যা শুরু হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন, নদীর তলদেশ ভরাট, নদীর পাড় দখল, নগরায়ণের ফলে জলাভূমি দখল, গাছপালা ও পাহাড় কাটায় নদীর তলদেশে পলি বৃদ্ধি, সময়মতো বন্যা প্রতিরোধকারী অবকাঠামো মেরামত না করা প্রভৃতি বন্যা সৃষ্টির অন্যতম কারণ বলে বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন। তবে সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, প্রতিবছর সীমান্তের ওপার থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির ফলে নদীর পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করে বন্যার সৃষ্টি করে। বন্যার ফলে বিশেষ করে দেশের উপকূলীয় ও নিম্নাঞ্চল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নদী-নালা, খাল-বিল প্লাবিত হয়ে বন্যার পানি উপচে পড়ে সমতল ভূমিতে। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, স্কুল-কলেজ সবই তখন অথৈ জলে ভাসে। প্রায় প্রতিবছরই অতিরিক্ত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে দেশের অসংখ্য মানুষ। নদীভাঙন ও বন্যার কারণে প্রতিবছর বাস্তুভিটাচ্যুত হয় অসংখ্য পরিবার। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে এ অবস্থায় অপরাপর দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ বন্যার ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্ভোগ থেকে রক্ষার জন্য এখন পর্যন্ত তেমন কোন ফলপ্রসূ উদ্যোগ নিতে পারেনি। বাঁধের মাধ্যমে এ যাবৎ বন্যা নিয়ন্ত্রণের কিছুটা চেষ্টা করা হলেও এ থেকে তেমন কোন সাফল্য আসেনি। চলতি বছরের বন্যার তীব্রতা ও ব্যাপকতা সে কথাই প্রমাণ করে। এবারের বন্যায় প্রায় তিন লাখ হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষিখাত, যা পুরো খাদ্য ব্যবস্থাপনার হিসাব পাল্টে দিয়েছে। বন্যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, একে শতভাগ রোধ করা সম্ভব নয় সত্য। কিন্তু পরিকল্পিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এর ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা অসম্ভব না।
বন্যার মতো নদীভাঙন বাংলাদেশের একটি পুনঃসংঘটিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রতিবছরই নদীভাঙনের শিকার হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে নতুন আশ্রয়ের খোঁজে দেশ-দেশান্তরে ঘুরে বেড়ায়। নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে ভাঙনের ফলে বসতভিটার সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রতিবছর নদীভাঙন ঠেকানোর জন্য ড্রেজিং পদ্ধতি অনুসরণ করে করতে গিয়ে সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে। কিন্তু এটা তেমন কোন কাজে আসে না। বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করার পর দেখা যায় প্রতিবছর যথারীতি মানুষ নদীভাঙনের শিকার হচ্ছে। চোখের সামনে তাদের ভিটামাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মুহূর্তের মধ্যে সব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ। ড্রেজিং বিষয়ে দেশের নদী বিশেষজ্ঞগণ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে সরকারকে পরামর্শ দিলেও কর্তৃপক্ষ তাতে কর্ণপাত করেনি। ফলে ফলাফল যা হওয়ার তাই হচ্ছে। প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা পানিতে যাচ্ছে! মূলত প্রচুর পরিমাণে পলি জমার কারণে ড্রেজিং পদ্ধতি আমাদের দেশে কোন কাজে আসে না। কর্তৃপক্ষকে কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে পরিবেশ ও বাস্তবতা থেকে ধারণা নিতে হবে। সবার আগে নদীগুলোর প্রবাহমান চরিত্র বুঝতে হবে। সব নদীর বৈশিষ্ট্য এক নয়। কোন নদী খরস্রোতা, আবার কিছু নদী আছে যাদের প্রবাহ সারাবছর একই রকম থাকে। এছাড়া বৈশিষ্ট্যগত ভিন্নতার কারণে সকল নদী সমপরিমাণ পলি ধারণ করে না। কোন নদী বেশি পলি ধারণ করে। আবার কোনটা একেবারেই কম। পদ্মা, যমুনা ও তিস্তার মতো বড় নদীগুলো সবচেয়ে বেশি পলি ধারণ। ফলে এসব নদীর ভাঙনও তুলনামূলকভাবে একটু বেশি। এসব বড় নদীগুলোর একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে পলি ধারণ করে। তাই এসব নদীর ক্ষেত্রে নদীশাসন একটা গুরুত্বপপূর্ণ বিষয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী নদী শাসন সম্ভব হলে বন্যা ও নদী ভাঙনের হাত থেকে অনেকাংশে যেমন রক্ষা পাওয়া যাবে তেমন নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা পাবে। তবে এক্ষেত্রে নদীর বৈশিষ্ট্যকে সমুন্নত রেখে তাকে ব্যবহার উপযোগী করা খুব জরুরি। বিপুল পরিমাণ পলি জমার কারণে যেহেতু নদীগুলোর পাড় ভাঙে, সেহেতু আমাদের নদীশাসনের প্রধান কাজ হওয়া উচিত লোকালয় থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে নদীর যে অংশে বেশি ভাঙে সে অংশে নদীর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পাড় সংরক্ষণ করা। এর পাশাপাশি নদীতীরবর্তী মানুষদের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা (জিবিএম) নদী ব্যবস্থার বাইরে ভারত-বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম আন্তঃসীমান্ত নদী হলো তিস্তা। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সার্বিক কৃষি খাত তিস্তার পানিপ্রবাহের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। উজানের দেশ হওয়ার সুবাদে দুদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ৫৪টি আন্তর্জাতিক নদীর অধিকাংশের পানিই একতরফাভাবে ভারত প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক অভিন্ন নদী নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ১৯৯৮ সালে ভারত বাংলাদেশ থেকে ৬০ কিলোমিটার উজানে সিকিমের গজলডোবায় তিস্তা নদীর ওপর একটি বাঁধ নির্মাণ করে। এ বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ভারত তিস্তার পানির ৮৫ শতাংশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। যে তিস্তা দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে পাঁচ থেকে আট হাজার কিউসেক পানি প্রবাহিত হতো, সেখানে এখন শুষ্ক মৌসুমে এসেছে মাত্র পাঁচশ কিউসেক। বর্তমানে তিস্তায় পানি সংকটের কারণে বোরো আবাদি কৃষকরা ঠিকমতো চাষাবাদ করতে পারেন না। উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম নদী হিসেবে পরিচিত অনন্ত যৌবনা তিস্তা এখন অপমৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে। তিস্তার ভারতীয় অংশে ব্যারাজ নির্মাণ করায় শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে পানির প্রবাহ ভীষণভাবে কমে গেছে। কিন্তু উজানে বন্যা হলে ভারত এ বাঁধের গেট খুলে দেয়। ফলশ্রুতিতে দেখা যায় প্রতিবছর বাংলাদেশের তিস্তার দুকূল প্লাবিত হয়ে বিস্তীর্ণ এলাকায় ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি করে। অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টনে ন্যায়ভিত্তিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন গঠন করা হয়। কিন্তু ভারতের কর্তৃত্ববাদী মনোভাবের কারণে এ কমিশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। ভারতের একতরফা নদী শাসন, খরা মৌসুমে তীব্র খরা, বর্ষায় দুকূল উপচিয়ে বন্যা, অপরিকল্পিতভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করাসহ নানা কারণে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা অববাহিকায় সার্বিক কৃষি খাত ও জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির সম্মুখীন। এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক কাঠামো বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে উজানে বাঁধের কারণে নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বিঘিœত হওয়ায় বাংলাদেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলজুড়ে যে মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য তা নিঃসন্দেহে অশনি সংকেত।
মরুকরণের কুপ্রভাব ইতোমধ্যে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক ক্ষতিসাধনের পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশকে ভারসাম্যহীন করে তুলছে। ভারতের একতরফাভাবে বাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহারের কারণে উত্তরাঞ্চলের পদ্মা, যমুনা, করতোয়া, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তার মতো প্রমত্তা নদীতে এখন পর্যাপ্ত পানি নেই। এদের শাখানদীগুলোর অবস্থা আরও করুণ। কিছু মরে শুকিয়ে গো-চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে! ভূগর্ভের পানির স্তর স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক নিচে নেমে গেছে। ফলে এ অঞ্চলের গভীর ও অগভীর নলকূপ দিয়ে চলতি ইরি-বোরো ধানের সেচ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান লবণাক্ততার কারণে শিল্পের ওপর হুমকি সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় কৃষিজমি ধ্বংস হচ্ছে। পলির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় নদনদীর নাব্য কমে যাচ্ছে। মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী সহসাই বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দারিদ্র্যপীড়িত উত্তরাঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা, এ অঞ্চলের মানুষের রুটি ও রুজির বিষয় বিবেচনা এবং দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো সুদৃঢ় করতে জরুরি ভিত্তিতে এখনি তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি সই তা পরিপূর্ণভাবে কার্যকর করা জরুরি। তা না হলে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে জনজীবন বিপন্ন হওয়ার পাশাপাশি প্রাকৃতিক ভারসাম্য যে মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়বে তা সহজেই অনুমেয়।
বাংলাদেশ উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে নদ-নদী দ্বারা প্রভাবিত। তাই এ অঞ্চলের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এ অঞ্চলের নদ-নদীর গতিপথ স্বাভাবিক রাখা খুব জরুরি। ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও নদী শাসনের মাধ্যমে নদীর প্রবাহ সচল করার জন্য সরকারকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। এছাড়া ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশের জন্য যে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করছে তা সমাধানে সরকারকে তৎপর হতে হবে। প্রয়োজনে এ সমস্যাটি আন্তর্জাতিক ফোরামে উত্থাপন করা যেতে পারে। ভারতের এই পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক তৎপরতা এখনই যদি জোরদার করা না হয় তাহলে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। উত্তরাঞ্চলের মৃতপ্রায় নদীগুলোকে বাঁচাতে নদীগুলোর যথাযথ পরিচর্যা, নদীশাসন ও সব ধরনের আগ্রাসন বন্ধ করে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে সংশ্লিষ্টদের অধিক উদ্যোগী হওয়ার এখনই সময়। অন্তত নদী বাঁচলে বাঁচবে স্বদেশ, এমন ভাবনা থেকে হলেও নদীরক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে আমাদের। পাশাপাশি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল নিয়ে যখন চিন্তা করা হবে তখন নদীকে আরেকটু অন্যরকম গুরুত্ব দিতেই হবে। কারণ এখানকার জনপদ, বসতি ও জনজীবন পরোক্ষ নয়, প্রত্যক্ষভাবে নদীর ওপর নির্ভরশীল।

Thursday, 16 November 2017

সংখ্যালঘু নির্যাতন : ধর্মীয় উগ্রবাদ বনাম সম্প্রীতির বন্ধন

বহির্বিশ্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে আমাদের একটা প্রশংসা আছে। হাজার বছর ধরে এ অঞ্চলের মানুষেরা মিলেমিশে বসবাস করে আসছে। ধর্মীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে ওঠে বিপদে আপদে একে অন্যের পাশে দাঁড়ানোর বহু নজির আছে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও নৈতিক স্খলনের ফলে সামাজিক সম্প্রীতির এ বন্ধন যেন দিন দিন হারিয়ে যেতে চলছে। মানুষের মধ্যে এখন অস্থিরতা বিরাজ করছে, অতি অল্পতেই একজন অন্যজনকে শারীরিক বা মানসিকভাবে আঘাত করছে। দুঃখজনক, আধুনিক এই যুগে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষা দীক্ষা প্রসারের ফলে মানুষের মাঝে নীতি-নৈতিকতা, সামাজিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা থাকলেও উদ্বেগজনকভাবে কমে যাচ্ছে! মূল্যবোধ অবক্ষয়ের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সমাজ ও রাষ্ট্রে।
সম্প্রতি রংপুরের সদর উপজেলার পাগলাপীর ঠাকুরবাড়ি গ্রামে ফেসবুকে এক হিন্দু ছেলের কথিত একটি স্ট্যাটাসে ইসলাম ধর্মের অবমাননার অভিযোগে সেখানে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে একদল ধর্মীয় উগ্রবাদী। তারা হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দিয়ে ইচ্ছামতো লুটপাট করেছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানতে পারলাম, উগ্রবাদীদের দেয়া আগুনে গ্রামের প্রায় ৩০টি হিন্দু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে বসবাসরত শত শত হিন্দু পরিবার এখন আছে নিরাপত্তাহীনতায়। আবারও হামলার আশঙ্কায় চরম আতঙ্কের মধ্যে আছেন তারা। ধর্ম রক্ষার নামে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার এ এক নগ্ন খেলা। সংখ্যালঘুদের ওপরে হামলা, নির্যাতন, তাদের উপাসনালয়-প্রতিমা ভাঙচুর, ঘরবাড়ি-দোকানপাটে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা নতুন না। তাদের জায়গা-জমি দখল করা কিংবা স্বল্পমূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য করার মতো অভিযোগও অনেক পাওয়া যায়। প্রতিনিয়ত দেখে আসছি যে, কারণে অকারণে সহিংস নির্যাতনের শিকার হন আমাদের দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষরা। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রামুতে এক বৌদ্ধপল্লীতে একই অভিযোগ তুলে সেখানে ব্যাপক সংহিসতা চালিয়েছিল উগ্রবাদীরা। উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী রামুর ১২টি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার ও ৩২টি বসতঘরে অগ্নিসংযোগ করেছিল। এ সময় আরও ছয়টি বৌদ্ধ বিহার ও শতাধিক বসতঘরে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছিল। পরদিন উখিয়া-টেকনাফে আরও কয়েকটি বৌদ্ধ বিহার ও বসতিতে একই ঘটনা ঘটেছিল। রামুর ক্ষত না শুকাতেই গত বছর (২০১৬ সালের ২৮ অক্টোবর) একই অভিযোগে আবার ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক পরিবার এবং তাদের মন্দিরের ওপর হামলা চালায় মৌলবাদী গোষ্ঠী। কিন্তু কেন এমন ধারাবাহিক হামলা? রাষ্ট্র অবশ্যই এ প্রশ্নের দায় এড়াতে পারে না। ফেসবুকে আপত্তিকর স্ট্যাটাস দিয়ে যদি কেউ অপরাধ করে দেশের প্রচলিত আইনে তার সাজা হোক। তাই বলে একজনের অপরাধে তার সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের ঘরবাড়িতে হামলা করে আগুন ধরিয়ে মালামাল লুট করতে হবে, এটা কেমন অবিচার?
একের পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় মনে প্রশ্নে জাগে, সংখ্যালঘুরা কি রাষ্ট্রের নাগরিক নয়? স্বাধীনভাবে কি এরা এদেশে বসবাস করতে পারবে না? এদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব কি রাষ্ট্রের ওপর বর্তায় না? হলফ করে বলতে পারি রামু, উখিয়া, নাসিরনগরের ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে যারা প্রকৃত দোষী ছিল তাদের যদি যথাযথ বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হতো তবে এসব নোংরা ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটত না। কিন্তু ভোটের রাজনীতিতে কেউ-ই দায় নিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষায় তৎপর হওয়ার আগ্রহ পায় না। আর এই দায়হীনতার সংস্কৃতি থেকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রভাবিত বিচার ব্যবস্থায় কোনো ঘটনাকে যদি রাজনৈতিক রূপ দেয়া যায় তাহলে তা যতই ক্ষমার অযোগ্য হোক না কেন, সুবিচার পাওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়ে।
‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’ বাংলা ভাষায় প্রচলিত একটা জনপ্রিয় প্রবাদ। আমাদের দেশের ধর্মান্ধদের দৃষ্টিতে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় যেন নন্দ ঘোষ! গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন একপ্রকার উৎসব। ভোটাধিকার প্রতিটি নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকার। কিন্তু দেখা যায়, জাতীয় নির্বাচন মানেই হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য আতঙ্ক। নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতার শিকার হন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষগুলো। অধিকাংশ সময় স্বাধীনভাবে তারা ভোটাধিকার পর্যন্ত প্রয়োগ করতে পারেন না। কোথাও তারা কোনো প্রার্থীকে ভোট দেয়ার অভিযোগে নির্যাতনের শিকার হন, কোথাও তাদের ওপর আক্রমণ আসে কোন প্রার্থীকে ভোট না দেয়ার অভিযোগে। এ যেন জলে কুমির ডাঙায় বাঘ অবস্থা। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে। আদালতের বিচারে যুদ্ধাপরাধীদের কয়েকজনের ফাঁসি কার্যকর হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেও এক শ্রেণীর মৌলবাদী গোষ্ঠী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালায়। অথচ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সাথে কিন্তু সংখ্যালঘুদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। বিভিন্ন সময় দেশের ভিতরে কিংবা দেশের বাইরের বিভিন্ন ইস্যুকে (বাবরি মসজিদে হামলা) কেন্দ্র করে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এটা বহু রক্তের বিনিময়ে পাওয়া মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের চেতনার বিচ্যুতির প্রমাণ।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাই ছিল অসাম্প্রদায়িক ও শোষণমুক্ত একটা রাষ্ট্র গড়ার। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পরও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ আজও প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। ফলে দেশে সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিরাপত্তার অভাব বোধ থেকে অনেক সংখ্যালঘু পরিবার নীরবে দেশ ত্যাগ করেছেন। কেউ স্বীকার করুক আর না করুক নাগরিক হিসেবে পূর্ণ অধিকার নিয়ে থাকতে না পারা এবং জানমালের পূর্ণ নিরাপত্তা না পাওয়ার কারণেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায় দেশ ত্যাগ করছেন। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, স্বাধীনতার চার দশকের মধ্যে দেশে জনসংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেলেও মূলত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সংখ্যা কমেছে। অনেকে বলেন, সংখ্যালঘুদের জন্মহার কম হওয়ার দিন দিন সংখ্যা কমে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলে। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই সংখ্যালঘুরা দ্রুত দেশত্যাগ শুরু করেন। সেই ধারা এখনো অব্যাহত আছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, স্বাধীনতার সময় এদেশে সংখ্যালঘুদের হার ছিল ২০-২১ ভাগ। কিন্তু বর্তমানে এই হার কমে এখন ৯.৭ শতাংশ।
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে একটা অপশক্তি দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা শুরু করেছে। এরা আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সম্পর্ককে বিনষ্ট করে আস্থার সংকট সৃষ্টি করতে চায়। উগ্রসাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী নির্যাতন ও অত্যাচারের মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগে বাধ্য করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়িত করার জন্য যে কোন মূল্যে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে ওঠে যারা এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি আমাদের ভুলে গেলে চলবে না ধর্মনিরপেক্ষ একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে আমাদের যে হাজার বছরের ঐতিহ্য আছে সেই সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রাখতে দেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধের কোনো বিকল্প নেই।

Saturday, 11 November 2017

Saudi Arabia and Iran: Regional power conflicts and Qatar crisis

The Saudi-led Arab alliance's blockade on Qatar is going on for nearly five months. The Saudi alliance has imposed sanctions against Qatar on backing of terrorism. Qatar has always denied the allegation. Although different diplomatic activities were targeted at different times to resolve the Qatar crisis, it did not see the light of Saudi Arabia and Iranian regional conflict.
Qatar's huge amount of financial assistance to the reconstruction of hamas-controlled Gaza, cooperation to the Muslim Brotherhood, Qatar-based news media Al-Jazeera's Israel policy and the United States anti-alignment, Turkish military based in Qatar and Qatar's economic prosperity are the main reasons for unprecedented diplomatic and commercial sanctions by Saudi Arabia and neighbouring Arab countries according to international political analysts.
General CC took the power by overthrowing elected Egyptian President Mohamed Morsi and started torture and repressive treatment of supporters of the Muslim Brotherhood. Qatar gave shelter to Brotherhood leaders and supporters who left the country for the torture of General Sisi. Besides, Qatar's relations with Saudi Arabia have cooled down on 'Hamas'. Saudi Arabia is trying their best to keep Qatar in its borders, one of which is to stop supporting the Palestinian liberation movement Hamas. Qatar has spent billions of dollars in building new homes, hospitals and roads in the Gaza Valley in recent years.
Early on the Saudi alliance presented a 13-point demand for normalizing relations with Qatar and the condition of withdrawal of the blockade. Among those claims -- the reduction of relations with Iran, the severing of ties with the Muslim Brotherhood and Hamas, to stop financial assistance for those who have declared terrorist organizations by the Saudi alliance and the United States of America, the Qatar-based Al-Jazeera channel shutdown are noteworthy. Many of the conditions provided by the Saudi alliance are contrary to Qatar's national interest. As a result Qatar did not accept the unreasonable demand of the Saudi alliance.
Qatar, however, did not accept the demand for closure of Al Jazeera. In a recent interview with the US media CBS television, Qatar's Amir Sheikh Tamim said Al-Jazeera's broadcast will not be closed. It can be assumed Qatar will not even stop the military base of Qatar for the sake of Qatar's security. Qatar will not lose relations with Iran for its own security. Qatar's Amir Sheikh Tamim again called on Saudi Arabia to negotiate to ease the ban of four Arab neighbours. Now the issue is to see whether the opponent responds to this call at all or the ongoing crisis exists.
However, due to the blockade of the Saudi alliance against Qatar, Gaza people will be in trouble. Claiming that the 2014 Israeli strike in Gaza, mainly with the financial support of Qatar, Hamas was restructuring their regime. Qatar pledged to provide USD 1 billion in aid there.
In the news release by December 2016, nearly one-fifth of its promised support was given. Meanwhile, Saudi Arabia's recent blockade has put Qatar at risk itself. Following they will be forced to cut the support given in Gaza. This proximity to Qatar with Hamas is believed to be the root cause of Saudi-Qatar conflicts.
As a result, Israel will be the main beneficiary of this blockade. Qatar will now be forced to talk to Israel under pressure. And the ostensible facilities for Hamas have already been minimized. It is easy to imagine, Israel is being most privileged because of the blockade of the Saudi alliance.
It is believed that the strong relationship between Qatar and Egypt's Muslim Brotherhood is one of the reasons for this ongoing conflict. Brotherhood opponent General CC of Egypt is specially supporting this blockbuster only for his sake. He is angry at the role of Qatar's al-Jazeera. Al-Jazeera had publicized the torture that General CC had played while taking power against the Brotherhood's staff irrespective of male and child.
Alongside 'Arab Spring' - there is no opportunity to deny Al Jazeera's encouraging role during the period. Outside of this, the news media spreading the news about the internal situation in Egypt is what the military junta is all about.
On the other hand, the channel has directly presented the malfeasance documents of the Saudi royal family in front of the world. Due to these reasons, the rage of Saudi Arabia has risen on Qatar and their channel.
Not too long ago, many civilians were killed in a funeral of throwing a Saudi bomb. This news was telecasted by the al-Jazeera. In fact, there is no scope to deny Al Jazeera's role in creating opportunities for freedom in the free media of the Middle East and the Gulf. Everybody in the world knows that Saudi Prince Salman and Abu Dhabi's Prince Zayed gave special support to General CC and the country's military forces in ousting the Muslim Brotherhood in Egypt's democratic government.
So, there is nothing to say about it that they will go directly against Qatar. Meanwhile, Saudi Arab has failed to expect obsequiousness behaviour from Qatar like Bahrain. As well as Qatar's independent foreign policy gave birth to concerns among them.
The Saudi alliance creates anti-Qatar blockade at a time when the country is busy preparing for the 2022 World Cup Football Tournament. They think that the amount of damage will increase further and they will be under pressure. But the change in the Middle East's geo-politics in the aftermath of the Arab Spring is the indirect result of this blockade. There is still a lot of incident to do in this play.

Monday, 30 October 2017

বৃদ্ধাশ্রম নয়, পরিবারই হোক বাবা-মায়ের নিরাপদ আবাস


মা-বাবার আত্মত্যাগ ও পরম স্নেহ-ভালোবাসায় দুর্বল ও পরনির্ভরশীল হয়ে জš§ নেওয়া শিশুটি একসময় আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে বাড়তে থাকে বাবা-মায়ের বয়স। সন্তান পড়াশোনা শেষে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে, তারপর বিয়ে করে সংসার শুরু করে। এ সময়ের মধ্যে বাবা-মা বৃদ্ধ হন। সদ্য জš§ নেওয়া শিশুটির মতো বয়সের ভারে তারাও দুর্বল ও পরনির্ভরশীল হয়ে পড়েন একসময়। বাবা-মায়ের এমন অসহায় অবস্থায় পরম স্নেহ-ভালোবাসায় লালিত সন্তান দায়িত্ব ও কর্তব্য ভুলে তাদের অনেকেই বোঝা ভাবতে শুরু করে। তখন শুরু হয় নতুন এক অধ্যায়। জীবনসায়াহ্নে শেষ দিনগুলো আর পরিবারের সবার সঙ্গে কাটানোর সৌভাগ্য হয় না। সন্তানের অবহেলা ও অযতেœ বৃদ্ধ বাবা-মায়ের শেষ ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রম।
বিশ্বের প্রথম বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রাচীন চীনে। গৃহছাড়া অবহেলিত ও অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রের এ উদ্যোগ ছিল শান রাজবংশের। খ্রিষ্টপূর্ব ২২০০ শতকে পরিবার থেকে বিতাড়িত অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য আলাদা এ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করে ইতিহাসের পাতায় বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে শান রাজবংশ। প্রাচীন চীনে শান রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত বৃদ্ধাশ্রমের ধারণা বর্তমান বিশ্বে প্রসার লাভ করেছে।
বাংলাদেশে ডা. একেএম আবদুল ওয়াহেদের উদ্যোগে ১৯৬০ সালে প্রথম বার্ধক্যে সবার জন্য শারীরিক-মানসিক সুস্থতা ও অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের একটু স্বস্তিময় জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান। এরপর সরকারি উদ্যোগে ১৯৮৫ সালে ঢাকার আগারগাঁওয়ে নিজস্ব ভবন এবং পরে ১৯৯৩-৯৪ সালে সরকারি অনুদানে হাসপাতাল ও হোম ভবন নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে দেশব্যাপী এ প্রতিষ্ঠানটির একাধিক শাখা রয়েছে। এছাড়া কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি, ব্র্যাক, ইআইডি, প্রবীণ অধিকার ফোরাম প্রভৃতি প্রবীণদের কল্যাণে কাজ করে।
বৃদ্ধাশ্রম মূলত ওইসব প্রবীণের জন্য, যাদের সন্তানাদি নেই, নেই কোনো আত্মীয়স্বজন। জীবনসায়াহ্নে যেন তারা একাকিত্বে না ভোগে, সুন্দর একটা পরিবেশে যেন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারেন, এসবের জন্যই বৃদ্ধাশ্রম। কিন্তু বর্তমান বৃদ্ধাশ্রমে যেসব প্রবীণ বসবাস করেন, তাদের অধিকাংশেরই সন্তানাদি এবং আত্মীয়স্বজন আছেন। এসব প্রবীণ অধিকাংশই সন্তান কর্তৃক দুর্ব্যবহার কিংবা নির্যাতনের শিকার। ভালোবাসার প্রিয় সন্তান শ্রদ্ধাবোধ ও কর্তব্যবোধ হারিয়ে তাদের বৃদ্ধাশ্রমে রেখে গেছেন। অনেক সময় দেখা যায়, বিয়ের পর সন্তান, বউ, শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে সংসার পেতেছেন। ওই দিকে নিজের বাবা-মায়ের কোনো খোঁজখবর রাখেন না। আবার সন্তানের বউও শ্বশুর-শাশুড়িকে নিজের বাবা-মা ভাবতে পারেন না। অবশেষে বাবা-মায়ের জায়গা হয় বৃদ্ধাশ্রমে। বৃদ্ধাশ্রমে থাকা মানুষগুলোর শেষ বয়সে আর সন্তান, নাতি-নাতনিদের সঙ্গে বাস করার সৌভাগ্য হয় না। জীবনসায়াহ্নে ভালোবাসার মানুষগুলোর সঙ্গে যৌবনের আনন্দঘন মুহূর্ত রোমন্থন করা হয় না। অথচ সন্তানের আবদার পূর্ণ করতে এ মানুষগুলোই নিজেদের সুখ-শান্তি হাসিমুখে বিসর্জন দিয়েছেন, সন্তান অসুস্থ হলে সারা রাত জেগে থেকে সন্তানের সেবা করেছেন, সন্তানের আরোগ্য লাভের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছেন, সন্তানের মঙ্গল কামনায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মানত করেছেন, সন্তানের মুখে ভালো খাবার তুলে দিতে গিয়ে অনেক সময় নিজেরা অনাহারে থেকেছেন, সন্তানের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য নিজেদের সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে গেছেন। কিন্তু কী হƒদয়বিদারক, ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, শেষ বয়সে সব ত্যাগের বিনিময়ে তাদের স্থান হয় বৃদ্ধাশ্রমে!
পাশ্চাত্যে বৃদ্ধাশ্রম একেবারে স্বাভাবিক ঘটনা। ওইসব দেশে সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হলেই সে স্বাধীন, অনেকটা মা-বাবার নিয়ন্ত্রণমুক্ত। সে ইচ্ছা করলে প্রবীণ বাবা-মাকে দেখাশোনা করতে পারে, ইচ্ছা না হলে নেই। রাষ্ট্রীয় কিংবা সামাজিক কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। রাষ্ট্র প্রবীণদের মৌলিক অধিকারের বিষয়ে সতর্ক। উন্নত দেশের প্রবীণরা যাতে সুন্দর ও সচ্ছলভাবে, সুন্দর একটা পরিবেশে জীবনের শেষ দিনগুলো কাটাতে পারে, রাষ্ট্র তার ব্যবস্থা করে। পাশ্চাত্যে মা-বাবা যখন একেবারে বয়সের ভারে বৃদ্ধ তখন তাদের আশ্রয় প্রবীণ আবাসন কেন্দ্র তথা বৃদ্ধাশ্রম অথবা অনেকে থাকেন নিঃসঙ্গ। নিঃসঙ্গ প্রবীণদের নিত্যসঙ্গী হয়ে যায় কুকুর বা অন্য কোনো পোষা প্রাণী। একান্ত আপনজন ব্যস্ত সন্তানরা বৃদ্ধ মা-বাবাকে দেখতে যাওয়ার জন্য ‘মাদারস ডে’, ‘ফাদারস ডে’ পালন করে। এদিনে কিছু গিফট বা হাতে ফুল নিয়ে সন্তানরা বৃদ্ধ মা-বাবাকে দেখতে যান। বাবা-মাও ওইদিন তাদের সন্তানের অপেক্ষায় থাকেন। এ নিয়ে তাদের কোনো অভিযোগ নেইÑবরং এটাই যেন তাদের সংস্কৃতি। কিন্তু আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে এরূপ ধারণা কি সামঞ্জস্যপূর্ণ? আমরা তো পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে বড় হই না। আমরা বড় হই বাবা-মায়ের আদর, পরম মমতায় ভালোবাসার সুশীতল ছায়ায়।
দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশেও এ অপসংস্কৃতি দিন দিন যেন চালু হচ্ছে। আকাশ সংস্কৃতির কালো থাবা থেকে আমাদের সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব ও মূল্যবোধ আজ আক্রান্ত। অপসংস্কৃতি গ্রাস করছে আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা তাই দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।
ছোটবেলায় পরিবার থেকে একটা শিশু যে শিক্ষা লাভ করে তা তার সামগ্রিক জীবনকে প্রভাবিত করে। বলা হয়, পরিবার হচ্ছে শাশ্বত বিদ্যালয়। মুরুব্বিদের সামনে পা তুলে চেয়ারে না বসা, তাদের মুখে মুখে তর্ক না করা, যানবাহনে কোনো বয়স্ক মানুষ দাঁড়িয়ে থাকলে সিট ছেড়ে তাকে বসতে দেওয়া, মুরব্বিদের সামনে ধূমপান না করা, বয়স্কদের আদেশ-নিষেধ মেনে চলা এমন নানা সামাজিক শিক্ষা পরিবার থেকে দেওয়া হতো। এখন এসব শিক্ষা দেওয়া হয় কি না, জানি না। তবে স্কুল ড্রেস পরে ছোট ছেলেমেয়েরা যেভাবে প্রকাশ্যে নেশা করে, অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকে, তাতে মনে হয় পরিবার থেকে এসব শিক্ষা উঠে গেছে। যুবসমাজের সামাজিক অবক্ষয় যে কতখানি ঘটেছে, তা একটা বিনোদন পার্কে ঘুরতে গেলেই দেখা যায়। আধুনিক যুগে এসে মানুষের মূল্যবোধ ও নৈতিকতা বাড়ার কথা, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এগুলো বর্তমানে আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে।
আমাদের সমাজে একটি প্রবাদ বাক্য আছেÑযদি কিছু জানতে চাও, তিন মাথার কাছে যাও। এই তিন মাথা বলতে বোঝায় আমাদের প্রবীণ সমাজ। পারিবারিক কিংবা সামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে মুরুব্বিদের মতামত নেওয়া হতো। সমাজ পরিবর্তনশীল। অবস্থার পরিবর্তন হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যে পরিবর্তনটা এসেছে, সেটা খুবই অস্বাভাবিক। এ পরিবর্তনে শ্রদ্ধার জায়গায় অশ্রদ্ধা, ভালোবাসার জায়গায় ঘৃণা, সংস্কৃতির জায়গায় অপসংস্কৃতি দখল করেছে। নৈতিকতা ও মূল্যবোধের কোনো স্থান নেই। তাই পারস্পরিক বিশ্বাস, আস্থা ও শ্রদ্ধাবোধের জায়গাটা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রবীণ জনগোষ্ঠী আজ চরম দুঃখ-দুর্দশায়। অসহায় ও বঞ্চনার মধ্যে অতিবাহিত হচ্ছে তাদের জীবন।
প্রবীণদের সামাজিক নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় সংসদে পিতা-মাতা ভরণপোষণ বিল-২০১৩ পাস করা হয়। বিলে বলা হয়েছে, প্রত্যেক সন্তানকে পিতামাতার সঙ্গে একই স্থানে বসবাস করতে হবে। কোনো সন্তান তার পিতা বা মাতাকে বা উভয়কে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বৃদ্ধনিবাস বা অন্য কোথাও বা আলাদাভাবে বসবাস করতে বাধ্য করতে পারবে না। প্রত্যেক সন্তানকে তার পিতামাতার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা ও পরিচর্চা করবে। তারা পৃথকভাবে বসবাস করলে সন্তানদের নিয়মিত সাক্ষাৎ করতে হবে। এ-সংক্রান্ত অপরাধের জন্য এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে সর্বোচ্চ তিন মাসের জেলের বিধান রাখা হয়েছে। পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে সরকার এ আইন পাস করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, আইন করে প্রবীণদের প্রতি সব বঞ্চনা, অবহেলা ও বৈষম্য দূর করা কি সম্ভব? মানুষের গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ায় প্রবীণদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, দেশে এখন এক কোটি ২৫ লাখের বেশি প্রবীণ রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এ হারে ২০২৫ সালে এ সংখ্যা এক কোটি ৮০ লাখ হবে প্রায়। ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধ, কর্তব্যবোধ আসলে আইন পাস করে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সবার মধ্যে নৈতিক ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন। ক্রমবর্ধমান প্রবীণ জনগোষ্ঠীর অধিকারের ভিত্তিতে স্বার্থ সংরক্ষণ করতে হলে শিশু ও কিশোর বয়সে সন্তান-সন্ততিকে সততা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে হবে। আজকের নবীন ভবিষ্যতের প্রবীণ। আজ যে ব্যক্তি তার মা-বাবাকে অসম্মান করবে, বৃদ্ধ বয়সে সেও তার সন্তানের কাছে অনুরূপ আচরণ পেতে পারেÑএটা সবারই মনে রাখা উচিত।
লেখা শেষ করব বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ থানার চণ্ডিপুর গ্রামের বাসিন্দা বীরেন্দ্রনাথ মজুমদারের মাতৃভক্তির সেই গল্প বলে। (এখানে দেখতে পাবেন যঃঃঢ়ং://স.ুড়ঁঃঁনব.পড়স/ধিঃপয?া=ঢাএঐছ৫ঁড়৪িও) বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে বীরেন্দ্রনাথের মা অসুস্থ। তিনি সার্বক্ষণিক তার মায়ের সেবা-যতœ করেন। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে মাকে টুকরির মধ্যে বসিয়ে মাথায় করে ১০ মাইল পাড়ি দিয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসেন। জানি না তার মা আজও বেঁচে আছেন কি না। দরিদ্র বীরেন্দ্রনাথের মাতৃভক্তির এ নিদর্শন থেকে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে। বৃদ্ধাশ্রম নয়, পরিবারই হোক বাবা-মায়ের নিরাপদ আবাস। ডিজিটাল যুগের ইট-পাথরের পরিবেশেও অটুট থাকুক মিহি সুতায় বাঁধা পরিবারের স্নেহ-ভালোবাসার বন্ধন, শ্রদ্ধা ও মর্যাদা।

Why will Bangladesh be responsible for the brutality of Myanmar?

 
The Rohingya problem is not a temporal human disaster, but planned ethnic cleansing, which has long been sponsored by state-sponsored generations. Myanmar's junta government formed a well-planned Arakanite, living in line with traditional rights of Rohingyas to convert them into an unspecified population, but Aung San Suu Kyi's political party formed a democratic government, but there was no change in the discriminatory policies. Recently, under the name of the Arakan Rohingya Salvation Army (ARSA), a rebel group formed by Myanmar in Rakhine state, the violence against the Rohingyas has started in 24 police camps and a military abduction. Myanmar's security forces and the extremist Buddhist community on the pretext of the attack of ARSA have launched inhuman torture and torture on innocent Rohingyas, as it is inhumane and condemnable.

In the face of killing, arson and rape, Rohingyas are running at the border with Bangladesh to save lives. Already, about one lakh Rohingyas entered Bangladesh; almost every few thousand Rohingyas are trying to enter Bangladesh every day. BGB and coastguard members are struggling to prevent Rohingyas from entering the village.

The Rohingya issue is not a recent incident. After taking the statehood in 1962, after the coup of General Ne Win, the suffering of Rohingyas came down. The military government then took a step to stop the illegal entry of that country. As a result of the action taken by the military junta government in 1977, persecution of Rohingyas came down. In 1978, under the 'Nagaman' ('Dragon King') campaign of Myanmar army, nearly two lakh Rohingyas were forced to take refuge in Bangladesh.

But in view of Bangladesh's extensive diplomatic engagement, the Myanmar bilateral agreement was signed, due to which Bangladesh's repatriation of Rohingya is possible. But the Myanmar junta government amended civil laws in 1982, which deprived the Rohingya civil rights. The military government claims that there is no group called 'Rohingya' in their country, these populations are in fact illegal communities of East Bengal, who have taken shelter in the Myanmar next to the patronage of the British government.

But history says that the origin and development of Rohingya Muslims in the political, social and cultural areas of Arakan In fact, by denying the citizenship of the Rohingya Muslim community, expelled from their country, the extremist Buddhist people of Myanmar chose such tricks to make Myanmar a Buddhist nation. Under the laws of the citizenship of 1982, the military junta identified Rohingya as a foreigner and took away the franchise.

When religious violence persists, then they Rape happens as regularly happens Their property was taken away forcibly. Compulsory labor is engaged in. Their education - the scope of health care is denied. Marriage is not allowed. If the child is not registered then. Ethnic identity is not allowed to be published. The numbers do not grow, so they are imposed on them one after another restrictions. In 1992, after the re-torture of Rohingyas, nearly Two lakh seventy thousand Rohingya refugees took shelter in Bangladesh.

Last October in Rakhine's Maungdaw, the army conducted extensive torture on Rohingya Muslims responsible for the Rohingya attacks by the border guards. At least 70 thousand Rohingya fled to Teknaf and Ukhia in Cox's Bazar after the army's torture. The concern is that since 1979, the Rohingyas who took refuge in Cox's Bazar Miyanmer did not take many of them back. Now there is a new Rohingya penetration again. Considering humanitarian issues, Bangladesh has always adopted liberal policy towards Rohingya. But the way how long?

With the adoption of the state power of the pro-democracy leader Aung San Suu Kyi National League for Democracy (NLD), the military rule lasted for more than 50 years in Myanmar lasted nearly two years ago. The democratic government started its journey. Aung San Suu Kyi has long been struggling to recover Myanmar's democracy, establish good governance and protect human rights, have been tortured, spent life in prison.

In the peace of the Nobel laureate Aung San Suu Kyi, so the expectations of the world were a little more. All thought that in Myanmar, true governance, rule of law and human rights will be established. Especially the prospect of the oppressed Rohingya Muslims in the country was a little more than expected. Rohingya thought that Suu Kyi's democratic government will restore their state rights; Happily - they can live in peace in Myanmar.

Going to the Rakhine state in the election campaign Suu Kyi told that it was important to protect the people from the ethnic and religious deprivation. All the people of the country have to be one. Hatred and intimidation towards each other does not bring any success. Though he did not live directly, he relied on Rakiben (once known as Arakan State) to the minority of the oppressed Rohingya Muslims. But they did not have to wait too long to have a dream. Even after the democratic government came to power, Rohingyas are being oppressed and getting new levels of day! San Suu Kyi, the Nobel laureate in peace, is absolutely silent on the Rohingya issue in the politics of vote!

The exact number of Rohingya refugees who have taken shelter in Bangladesh as a result of the violence of the radical Buddhists of Myanmar, has no accurate statistics. However, in the UNHCR global report last year, the number of non-registered Rohingya in Bangladesh is 2 lakh 43 thousands.

And their managed refugee camp has 33 thousand 207 people. That is, the number of Rohingya registered and unregistered Rohingya from Myanmar in Bangladesh becomes number two lakh 76 thousand 207. Already more than one lakh Rohingyas have already been infiltrated in Bangladesh. That is, the number is increasing day by day, which is very worrying. And Myanmar is not even able to return Rohingyas infiltrating Bangladesh very easily. Because the Myanmar government does not recognize Rohingya as the citizen of that country.

As a result, many of the Rohingyas who took shelter as refugees in Bangladesh had been persecuted at different times in the past and could not be repatriated. Although Rohingya issue is the internal subject of Myanmar, Bangladesh is well-connected to this problem. Considering the humanitarian situation, Bangladesh had given shelter to Rohingya refugees and is still giving it, but now it is time to consider internal safety measures and state capabilities.

Bangladesh is not only under the pressure of its population, it is necessary to satisfy its basic needs; In the meantime, the time has come to assert the rationale for the refugees to undergo extra pressure year after year. Besides, the safety of Bangladesh also needs to be considered. In the country, militancy in the country is trying to head out. Many Rohingyas are also involved in news related to drug trade, arms trade, and smuggling, which is threatening for the security of Bangladesh.

Due to the Rohingyas's position of infiltrators, the rare forest reserve in Teknaf has already been completely destroyed. Apart from these problems, due to the large number of Rohingyas, their economic impact on the country's economy has been affected. The Myanmar government wants to impose the Rohingya liability on Bangladesh's shoulders for all time. The ruling regime of Myanmar often publicly declares these Rohingyas as illegal immigrants Bangladeshi.

For this, it is necessary to be very cautious to solve this problem. Bangladesh can not take responsibility for Rohingyas due to the similarities in language, religion or ethno-composite structure. Bangladesh should pressurize Myanmar as quickly as possible to solve the Rohingya problem. Regional agencies, including SAARC, ASEAN, OIC, may be pleased to put pressure on Myanmar. Bangladesh may raise the problem of Rohingya in the UN if needed. Bangladesh is concerned about the Rohingya issue, it is a matter of concern, and it will take an interest in internationalizing the Rohingya problem.

However, on the issue of Rohingya, Bangladesh-Myanmar's bilateral relations should not be ruined. Because Myanmar is an important factor in Bangladesh's foreign policy. Smuggling of border, Rohingya problem, maritime boundary, border problem between the two countries is going on for a long time. At present, the border problem of the two countries is not the same as mentioning.

On the basis of negotiation, the maritime boundary of the international court has been determined. Recently, smuggling is also at controlled level. Now the Rohingya problem seems to be an obstacle to bilateral relations. Therefore, the two countries have to be sincere to solve this problem. If Bangladesh fails to solve this problem diplomatically, then Rohingya refugees will have to bear the burden of living forever.

Tensions in the Korean peninsula

Tensions have erupted in the Korean peninsula, with the recent North Korean nuclear and missile testing. This year, North Korea has launched 22 missile experiments and successfully blasted a hydrogen bomb. Following the inter-continent missile test in July this year, the United Nation imposed strong sanctions on the North Korea on the proposal of the United States.
Angered by the UN's decision, North Korea threatened to attack the United States controlled Island 'Guam' in the Pacific Ocean. Later, North Korea stopped the attack in Guam but, the tension between the two countries United States and North Korea has been continuing. Political analysts believe that the way the United States and North Korea blame each other and threaten war can be started any time in this region.
Earlier in 1994, there was a provocative situation cantering on obstructing the entry of international observers at the North Korean nuclear complex. Then, it was resolved diplomatically.
North Korea threatened attacks in the United States, Japan and South Korea over the years. But, in reality North Korea did not always have the courage to attack. But, it is difficult to say what is going to happen now. It's hard to keep faith on US President Donald Trump and North Korean President Kim Jong-un, since both of them are eccentric in nature.
America's antagonism with North Korea is congenital. Japan was in possession of Korea before World War II. When Japan was capitulated in World War II, Korea was divided into two groups. In the support of the then Soviet Union, socialism was established in North Korea.
On the other hand, the democratic government was formed in South Korea with direct support from the United States. South Korea received a lot of help from the United States to increase economic and military power.
The United States provides all-round help to convert South Korea into a powerful state and provides South Korean cooperation and favours for North Korean occupation. Once upon a time the conspiracy has centred this state of the North of the Korean Islands. But, nothing happened. The country is now in a position to ignore America's brazen conspiracies that the United States is obliged to talk to North Korea.
US Secretary of State Rex Tillerson has recently visited China to prevent North Korea from carrying nuclear weapons and missile programmes. North Korea's biggest ally is China, and North Korea has survived for the economic and military aid of China.
Now, around 90 per cent of the country's trade is with China. The United States needs help of China to put economic pressure on North Korea. But, how much response China will do to the call of the United States is a matter of question.
It is very important for China to maintain the stability of the Korean region. Considering this, China may agree with the United States on some issues. But, China will never want to destroy North Korea. Because of the destruction of North Korea, such a united Korea will be created, resulting in US troops coming to the border of China.
If the war begins in the Korean Peninsula, billions of people will come to China to take shelter. Since, North Korea is a nuclear power State, the United States will not want to fight with North Korea thinking about the future of themselves and their allies.
The economy is also a big reason behind it. If the war on the Korean island starts, chaos in the trade sector will be created. South Korea will be most affected as a supply chain; South Korea is of great importance.
South Korea is a big exporter of intermediate goods. Besides, one-fourth of the global income of SML Holdings NV Company comes from South Korea. If the internal situation is negative, foreign companies will withdraw business from the country. The investment will be reduced which will affect the world trade. So, the ongoing nuclear tension in the Korean peninsula, mutual fighting is not only a threat to East Asia but also a threat to overall global peace, economy and stability.
The consequences of the war will be horrific if it occurs really.
Russia, Japan and China can play a big role in resolving the current crisis. Especially, China can improve the situation rapidly. China has the importance of both the United States and North Korea.

Friday, 18 August 2017

রোহিঙ্গা সমস্যা : মায়ানমারের বর্বর নীতির দায়ভার বাংলাদেশ বহন করবে কেন?


অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) মহাসচিব ইউসেফ বিন আহমদ আল ওসাইমিন-এর সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়েরোহিঙ্গাইস্যু নতুন করে আলোচনায় উঠেছে। চারদিনের সফরে তিনি দ্বিপক্ষীয় বিষয়াদি আলোচনার পাশাপাশি মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় জোটের এই নেতা কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার সুরক্ষায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আর্কষণ করেছেন। একইসঙ্গে স্বদেশে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়ার জন্য মায়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তবে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার ব্যাপারে বিশ্বনেতা/আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যতটা তৎপর রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে ঠিক কতটুকু তৎপর প্রশ্ন হয়ত করা যেতেই পারে।
রোহিঙ্গা সমস্যাটি সাম্প্রতিক কোন ঘটনা না। জেনারেল নে উইন সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ১৯৬২ সালে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার পর থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর দুর্ভোগ নেমে আসে। সামরিক সরকার তখন সে দেশে বে-আইনি অনুপ্রবেশ বন্ধ করার জন্য একটি পদক্ষেপ নেয়। ১৯৭৭ সালে সামরিক জান্তা সরকার গৃহীত সেই পদক্ষেপের ফলশ্রুতিতে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন নেমে আসে। ১৯৭৮ সালে মায়ানমার সেনাবাহিনীর নাগামান (ড্রাগন রাজা) অভিযানের ফলে প্রায় দুই লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু তখন বাংলাদেশের ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ-মায়ানমার দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়। কিন্তু মায়ানমার জান্তা সরকার ১৯৮২ সালে এমনভাবে নাগরিক আইন সংশোধন করে যা রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। সামরিক সরকার দাবি করে রোহিঙ্গা বলে কোন গোত্র তাদের দেশে নেই, এই জনগোষ্ঠী আদতে পূর্ব বাংলা থেকে যাওয়া অবৈধ জনগোষ্ঠী, যারা ব্রিটিশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পরবর্তী মায়ানমারে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু ইতিহাস বলে, রোহিঙ্গা মুসলমানরা শত বছর ধরে আরাকান রাজ্যে বসবাস করছেন। এবং তারা মায়ানমারের বৈধ নাগরিক। মূলত রোহিঙ্গা মুসলমান সম্প্রদায়ের নাগরিকত্ব অস্বীকার করার মাধ্যমে, তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করে মায়ানমারের উগ্র-মৌলবাদী বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী মায়ানমারকে একটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্যই এমন কূটকৌশল বেছে নেয়। ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনের প্রেক্ষিতে সামরিক জান্তা রোহিঙ্গাদের বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে ভোটাধিকার কেড়ে নেয়। ধর্মীয়ভাবেও তাদের উপর অত্যাচার শুরু হতে থাকে তখন। হত্যা-ধর্ষণ হয়ে পড়ে যেন নিয়মিত ঘটনা। তাদের সম্পত্তি জোর করে কেড়ে নেয়া হয়। বাধ্যতামূলক শ্রমে নিয়োজিত করা হয়। তাদের শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়। বিয়ে করার অনুমতি দেয়া হয় না। সন্তান হলে নিবন্ধন করা হয় না। জাতিগত পরিচয় প্রকাশ করতে দেয়া হয় না। সংখ্যা যাতে না বাড়ে, সে জন্য তাদের ওপর আরোপিত হয় একের পর এক বিধিনিষেধ। ১৯৯২ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর পুনরায় নির্যাতন শুরু হলে তখন প্রায় লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালের অক্টোবরে রাখাইনের মংডুতে সীমান্তরক্ষীদের পোস্টে সন্ত্রাসী হামলায় রোহিঙ্গাদের দায়ী করে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালায়। সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে কমপক্ষে ৭০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা কক্সবাজারের টেকনাফ উখিয়ায় পালিয়ে আসে বলে বিভিন্ন সংস্থা সূত্রে বলা হয়। ১৯৭৯ সালের পর থেকে যেসব রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছিলেন মায়ানমার তাদের অনেককেই আর ফিরিয়ে নেয়নি। মায়ানমারের উগ্র মৌলবাদী বৌদ্ধদের নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে ঠিক কতজন রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। তবে ইউএনএইচসিআরের বৈশ্বিক প্রতিবেদন ২০১৬তে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অনিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা লাখ ৪৩ হাজার। আর তাদের পরিচালিত শরণার্থী শিবিরে রয়েছে ৩৩ হাজার ২০৭ জন। অর্থাৎ সব মিলে বাংলাদেশে মায়ানমার থেকে আসা নিবন্ধিত অনিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়ায় লাখ ৭৬ হাজার ২০৭। বাংলাদেশ সরকার সংখ্যা তিন থেকে পাঁচ লাখের ভেতর বলে দাবি করে। বাংলাদেশ-মায়ানমার সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত এক চুক্তির ফলে ১৯৯২ সালের ১৫ মে মাসের মধ্যে মায়ানমার সরকার শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়ার কথা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মায়ানমার সরকার মাত্র ২২ হাজার শরণার্থীকে তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে। বাকিদের নাগরিক হিসেবেই স্বীকার করে না। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সমস্যাটি দুদেশের সম্পর্কের মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা হিসেবে রয়েই গেছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুটি এখন আর মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় নেই। বাংলাদেশও এখন সমস্যার সাথে বেশ ভালোভাবে জড়িত। মানবিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে সত্য কিন্তু এখন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রের সক্ষমতা বিবেচনা করার সময় এসেছে। বাংলাদেশ এমনিতেই নিজের জনসংখ্যা চাপে ন্যুব্জ, নিজেদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতেই হিমশিম খেতে হয়; এরমধ্যে বছরের পর বছর শরণার্থীদের বাড়তি চাপ সহ্য করার যৌক্তিকতা ভাববার সময় এসেছে। রোহিঙ্গাদের অনেকেই মাদক ব্যবসা, অস্ত্রব্যবসা, এবং চোরাচালানির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে এমন খবরও গণমাধ্যমে প্রচার হচ্ছে, যা বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের অবস্থানের কারণে টেকনাফে সংরক্ষিত বিরল বনাঞ্চল এরই মধ্যে প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। এসব সমস্যা ছাড়াও বিরাট অংকের রোহিঙ্গাদের ভরণ-পোষণের কারণে এদেশের অর্থনীতির ওপরে তার প্রভাব পড়ছে। রোহিঙ্গা সমস্যা কোন সাময়িক বিপর্যয় নয়, দীর্ঘ কয়েক যুগের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় চলে আসা এথনিক ক্লিনজিং। তাই এই সমস্যাকে আর মানবিক হিসেবে বিবেচনা করার কোন সুযোগ নেই। মায়ানমার সরকার চায় রোহিঙ্গার দায় সব সময়ের জন্য বাংলাদেশের কাঁধে চাপিয়ে দিতে। মায়ানমারের শাসকগোষ্ঠী প্রায়ই প্রকাশ্যে এই রোহিঙ্গাদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি হিসেবে আখ্যায়িত করে বক্তব্য দিয়ে থাকেন। জন্য সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশকে খুব বেশি সতর্ক হতে হবে। শুধু ভাষা, ধর্ম কিংবা নৃতাত্ত্বিক গঠনে সাদৃশ্য থাকার কারণেই বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের দায়ভার নিতে পারে না। বাংলাদেশের উচিত হবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যত দ্রুত সম্ভব মায়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। মায়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য সার্ক, আসিয়ান, ওআইসিসহ আঞ্চলিক সংস্থাগুলোর দারস্থ হওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে সমস্যাটি জাতিসংঘেও উত্থাপন করা যেতে পারে। রোহিঙ্গারা যেহেতু শুধু মুসলিম হওয়ার কারণে নিজদেশে অত্যাচারিত, এক্ষেত্রে মুসলিম বিশ্বের জোট হিসেবে ওআইসি সমস্যা সমাধানে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা ইস্যু কতটা উদ্বেগজনক, বিশ্বনেতাদের তা অনুধাবন করানোর মাধ্যমে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যাটি আন্তর্জাতিকীকরণ করার উদ্যোগ নিতে পারে। তবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ-মায়ানমার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক যেন নষ্ট না হয় সেদিকেও সতর্ক থাকতে হবে। কারণ বাংলাদেশের পূর্বমুখী পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে মায়ানমার একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। দুদেশের সীমান্ত সমস্যা, সমুদ্রসীমা নির্ণয়, সীমান্তে চোরাচালান, রোহিঙ্গা সমস্যা দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে টানাপড়েন সৃষ্টি করেছিল। বর্তমানে দুই দেশের সীমান্ত সমস্যা তেমন উল্লেখ করার মতো নেই। দুই দেশের সমঝোতার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক আদালতে সমুদ্রসীমার হিস্যা নির্ধারিত হয়ে গেছে। ইদানীং চোরাচালানও নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে। একমাত্র রোহিঙ্গা সমস্যাই দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে প্রধান বাধা। তাই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে দুদেশের খুব বেশি আন্তরিক হওয়া জরুরি। আর বাংলাদেশ যদি সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয় তাহলে সারাজীবন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভার বয়ে বেড়াতে হবে।