Sunday, 19 November 2017

উত্তরাঞ্চলের বন্যা ও নদীশাসন


‘রাইসর্ষের ক্ষেত সকালে উজ্জ্বল হলো- দুপুরে বিবর্ণ হয়ে গেল
তারই পাশে নদী;
নদী, তুমি কোন্ কথা কও?
অশথের ডালপালা তোমার বুকের ’পরে পড়েছে যে,
জামের ছায়ায় তুমি নীল হলে,
আরও দূরে চলে যাই
সেই শব্দ পিছে পিছে আসে;
নদী নাকি?
নদী, তুমি কোন্ কথা কও?’
রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ নদী নিয়ে যেমন রোমান্টিকতায় ভুগেছেন তার বিপরীত চিত্রও বোধকরি কম নেই বাংলাদেশকে ঘিরে। কবি ও কবিতার বাইরে আমাদের জীবন, সাহিত্য, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির সর্বস্তরে নদ-নদীর প্রভাব রয়েছে। নদ-নদীর কারণেই আমাদের দেশ সুজলা-সুফলা ও শস্য-শ্যামলা। ইতিহাসের সুদূর অতীত থেকে পৃথিবীতে যত আলোচিত প্রাচীন সভ্যতা রয়েছে তার সবই ছিল নদীকেন্দ্রিক। নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে সহগ্র নগর ও বন্দর। বস্তুত মানবসভ্যতা নদীর কাছে যারপরনাই ঋণী। আমাদের দেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর হওয়ার কারণে এদেশের অধিকাংশ মানুষের জীবিকা অনেকাংশে নদীর ওপর নির্ভরশীল। দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ সরাসরি কৃষিকাজে যুক্ত। অনেকে আবার মৎস চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। দেশের চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনীয় সেচের পানির প্রধান উৎস হিসেবে নদ-নদীগুলোর ভূমিকা অনস্বীকার্য। আঁকাবাঁকা সর্পিল নদীগুলো এদেশের ও দেশের মানুষের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের অবহেলায়, উদাসীনতায়, অপরিচর্যায় ও প্রয়োজনীয় নদী শাসনের অভাবে আমাদের মূল্যবান সম্পদ নদীগুলো ক্রমেই শুকিয়ে মৃত খাল ও মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। নদীগুলো হারিয়ে ফেলছে স্ববৈশিষ্ট্য। উজানের দেশ ভারতের অবিবেচনাপ্রসূত পানি প্রত্যাহার এবং যথাযথ নদী শাসনের অভাবে নদীপথের পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে বর্ষাকালীন সময়ে ভয়াবহ নদী ভাঙনের তীব্রতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রতিবছর নদীর তীরভাঙন ও নিয়মিত বন্যা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলার পাশাপাশি জনগণের জন্য সৃষ্টি করছে অপরিমেয় দুঃখকষ্ট। মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয় দেশের চলমান উন্নয়ন।
বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে বহুকাল ধরেই আমাদের বসবাস। প্রায় প্রতিবছরই এদেশের বিভিন্ন অঞ্চল, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো বন্যার কারণে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশের এ অঞ্চল প্রায় প্রতিবছরই বন্যাকবলিত হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে বন্যা যেন এ অঞ্চলের মানুষের নিত্যসঙ্গী! এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি আগস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বন্যা শুরুর মৌসুম হিসেবে ধরা হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিগত কয়েক বছর ধরে মোটামুটি এপ্রিলের শুরুতেই বন্যা শুরু হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন, নদীর তলদেশ ভরাট, নদীর পাড় দখল, নগরায়ণের ফলে জলাভূমি দখল, গাছপালা ও পাহাড় কাটায় নদীর তলদেশে পলি বৃদ্ধি, সময়মতো বন্যা প্রতিরোধকারী অবকাঠামো মেরামত না করা প্রভৃতি বন্যা সৃষ্টির অন্যতম কারণ বলে বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন। তবে সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, প্রতিবছর সীমান্তের ওপার থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির ফলে নদীর পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করে বন্যার সৃষ্টি করে। বন্যার ফলে বিশেষ করে দেশের উপকূলীয় ও নিম্নাঞ্চল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নদী-নালা, খাল-বিল প্লাবিত হয়ে বন্যার পানি উপচে পড়ে সমতল ভূমিতে। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, স্কুল-কলেজ সবই তখন অথৈ জলে ভাসে। প্রায় প্রতিবছরই অতিরিক্ত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে দেশের অসংখ্য মানুষ। নদীভাঙন ও বন্যার কারণে প্রতিবছর বাস্তুভিটাচ্যুত হয় অসংখ্য পরিবার। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে এ অবস্থায় অপরাপর দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ বন্যার ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্ভোগ থেকে রক্ষার জন্য এখন পর্যন্ত তেমন কোন ফলপ্রসূ উদ্যোগ নিতে পারেনি। বাঁধের মাধ্যমে এ যাবৎ বন্যা নিয়ন্ত্রণের কিছুটা চেষ্টা করা হলেও এ থেকে তেমন কোন সাফল্য আসেনি। চলতি বছরের বন্যার তীব্রতা ও ব্যাপকতা সে কথাই প্রমাণ করে। এবারের বন্যায় প্রায় তিন লাখ হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষিখাত, যা পুরো খাদ্য ব্যবস্থাপনার হিসাব পাল্টে দিয়েছে। বন্যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, একে শতভাগ রোধ করা সম্ভব নয় সত্য। কিন্তু পরিকল্পিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এর ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা অসম্ভব না।
বন্যার মতো নদীভাঙন বাংলাদেশের একটি পুনঃসংঘটিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রতিবছরই নদীভাঙনের শিকার হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে নতুন আশ্রয়ের খোঁজে দেশ-দেশান্তরে ঘুরে বেড়ায়। নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে ভাঙনের ফলে বসতভিটার সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রতিবছর নদীভাঙন ঠেকানোর জন্য ড্রেজিং পদ্ধতি অনুসরণ করে করতে গিয়ে সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে। কিন্তু এটা তেমন কোন কাজে আসে না। বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করার পর দেখা যায় প্রতিবছর যথারীতি মানুষ নদীভাঙনের শিকার হচ্ছে। চোখের সামনে তাদের ভিটামাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মুহূর্তের মধ্যে সব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ। ড্রেজিং বিষয়ে দেশের নদী বিশেষজ্ঞগণ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে সরকারকে পরামর্শ দিলেও কর্তৃপক্ষ তাতে কর্ণপাত করেনি। ফলে ফলাফল যা হওয়ার তাই হচ্ছে। প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা পানিতে যাচ্ছে! মূলত প্রচুর পরিমাণে পলি জমার কারণে ড্রেজিং পদ্ধতি আমাদের দেশে কোন কাজে আসে না। কর্তৃপক্ষকে কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে পরিবেশ ও বাস্তবতা থেকে ধারণা নিতে হবে। সবার আগে নদীগুলোর প্রবাহমান চরিত্র বুঝতে হবে। সব নদীর বৈশিষ্ট্য এক নয়। কোন নদী খরস্রোতা, আবার কিছু নদী আছে যাদের প্রবাহ সারাবছর একই রকম থাকে। এছাড়া বৈশিষ্ট্যগত ভিন্নতার কারণে সকল নদী সমপরিমাণ পলি ধারণ করে না। কোন নদী বেশি পলি ধারণ করে। আবার কোনটা একেবারেই কম। পদ্মা, যমুনা ও তিস্তার মতো বড় নদীগুলো সবচেয়ে বেশি পলি ধারণ। ফলে এসব নদীর ভাঙনও তুলনামূলকভাবে একটু বেশি। এসব বড় নদীগুলোর একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে পলি ধারণ করে। তাই এসব নদীর ক্ষেত্রে নদীশাসন একটা গুরুত্বপপূর্ণ বিষয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী নদী শাসন সম্ভব হলে বন্যা ও নদী ভাঙনের হাত থেকে অনেকাংশে যেমন রক্ষা পাওয়া যাবে তেমন নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা পাবে। তবে এক্ষেত্রে নদীর বৈশিষ্ট্যকে সমুন্নত রেখে তাকে ব্যবহার উপযোগী করা খুব জরুরি। বিপুল পরিমাণ পলি জমার কারণে যেহেতু নদীগুলোর পাড় ভাঙে, সেহেতু আমাদের নদীশাসনের প্রধান কাজ হওয়া উচিত লোকালয় থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে নদীর যে অংশে বেশি ভাঙে সে অংশে নদীর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পাড় সংরক্ষণ করা। এর পাশাপাশি নদীতীরবর্তী মানুষদের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা (জিবিএম) নদী ব্যবস্থার বাইরে ভারত-বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম আন্তঃসীমান্ত নদী হলো তিস্তা। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সার্বিক কৃষি খাত তিস্তার পানিপ্রবাহের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। উজানের দেশ হওয়ার সুবাদে দুদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ৫৪টি আন্তর্জাতিক নদীর অধিকাংশের পানিই একতরফাভাবে ভারত প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক অভিন্ন নদী নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ১৯৯৮ সালে ভারত বাংলাদেশ থেকে ৬০ কিলোমিটার উজানে সিকিমের গজলডোবায় তিস্তা নদীর ওপর একটি বাঁধ নির্মাণ করে। এ বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ভারত তিস্তার পানির ৮৫ শতাংশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। যে তিস্তা দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে পাঁচ থেকে আট হাজার কিউসেক পানি প্রবাহিত হতো, সেখানে এখন শুষ্ক মৌসুমে এসেছে মাত্র পাঁচশ কিউসেক। বর্তমানে তিস্তায় পানি সংকটের কারণে বোরো আবাদি কৃষকরা ঠিকমতো চাষাবাদ করতে পারেন না। উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম নদী হিসেবে পরিচিত অনন্ত যৌবনা তিস্তা এখন অপমৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে। তিস্তার ভারতীয় অংশে ব্যারাজ নির্মাণ করায় শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে পানির প্রবাহ ভীষণভাবে কমে গেছে। কিন্তু উজানে বন্যা হলে ভারত এ বাঁধের গেট খুলে দেয়। ফলশ্রুতিতে দেখা যায় প্রতিবছর বাংলাদেশের তিস্তার দুকূল প্লাবিত হয়ে বিস্তীর্ণ এলাকায় ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি করে। অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টনে ন্যায়ভিত্তিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন গঠন করা হয়। কিন্তু ভারতের কর্তৃত্ববাদী মনোভাবের কারণে এ কমিশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। ভারতের একতরফা নদী শাসন, খরা মৌসুমে তীব্র খরা, বর্ষায় দুকূল উপচিয়ে বন্যা, অপরিকল্পিতভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করাসহ নানা কারণে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা অববাহিকায় সার্বিক কৃষি খাত ও জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির সম্মুখীন। এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক কাঠামো বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে উজানে বাঁধের কারণে নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বিঘিœত হওয়ায় বাংলাদেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলজুড়ে যে মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য তা নিঃসন্দেহে অশনি সংকেত।
মরুকরণের কুপ্রভাব ইতোমধ্যে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক ক্ষতিসাধনের পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশকে ভারসাম্যহীন করে তুলছে। ভারতের একতরফাভাবে বাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহারের কারণে উত্তরাঞ্চলের পদ্মা, যমুনা, করতোয়া, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তার মতো প্রমত্তা নদীতে এখন পর্যাপ্ত পানি নেই। এদের শাখানদীগুলোর অবস্থা আরও করুণ। কিছু মরে শুকিয়ে গো-চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে! ভূগর্ভের পানির স্তর স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক নিচে নেমে গেছে। ফলে এ অঞ্চলের গভীর ও অগভীর নলকূপ দিয়ে চলতি ইরি-বোরো ধানের সেচ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান লবণাক্ততার কারণে শিল্পের ওপর হুমকি সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় কৃষিজমি ধ্বংস হচ্ছে। পলির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় নদনদীর নাব্য কমে যাচ্ছে। মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী সহসাই বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দারিদ্র্যপীড়িত উত্তরাঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা, এ অঞ্চলের মানুষের রুটি ও রুজির বিষয় বিবেচনা এবং দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো সুদৃঢ় করতে জরুরি ভিত্তিতে এখনি তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি সই তা পরিপূর্ণভাবে কার্যকর করা জরুরি। তা না হলে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে জনজীবন বিপন্ন হওয়ার পাশাপাশি প্রাকৃতিক ভারসাম্য যে মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়বে তা সহজেই অনুমেয়।
বাংলাদেশ উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে নদ-নদী দ্বারা প্রভাবিত। তাই এ অঞ্চলের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এ অঞ্চলের নদ-নদীর গতিপথ স্বাভাবিক রাখা খুব জরুরি। ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও নদী শাসনের মাধ্যমে নদীর প্রবাহ সচল করার জন্য সরকারকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। এছাড়া ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশের জন্য যে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করছে তা সমাধানে সরকারকে তৎপর হতে হবে। প্রয়োজনে এ সমস্যাটি আন্তর্জাতিক ফোরামে উত্থাপন করা যেতে পারে। ভারতের এই পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক তৎপরতা এখনই যদি জোরদার করা না হয় তাহলে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। উত্তরাঞ্চলের মৃতপ্রায় নদীগুলোকে বাঁচাতে নদীগুলোর যথাযথ পরিচর্যা, নদীশাসন ও সব ধরনের আগ্রাসন বন্ধ করে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে সংশ্লিষ্টদের অধিক উদ্যোগী হওয়ার এখনই সময়। অন্তত নদী বাঁচলে বাঁচবে স্বদেশ, এমন ভাবনা থেকে হলেও নদীরক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে আমাদের। পাশাপাশি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল নিয়ে যখন চিন্তা করা হবে তখন নদীকে আরেকটু অন্যরকম গুরুত্ব দিতেই হবে। কারণ এখানকার জনপদ, বসতি ও জনজীবন পরোক্ষ নয়, প্রত্যক্ষভাবে নদীর ওপর নির্ভরশীল।

No comments:

Post a Comment