Sunday, 19 November 2017

উত্তরাঞ্চলের বন্যা ও নদীশাসন


‘রাইসর্ষের ক্ষেত সকালে উজ্জ্বল হলো- দুপুরে বিবর্ণ হয়ে গেল
তারই পাশে নদী;
নদী, তুমি কোন্ কথা কও?
অশথের ডালপালা তোমার বুকের ’পরে পড়েছে যে,
জামের ছায়ায় তুমি নীল হলে,
আরও দূরে চলে যাই
সেই শব্দ পিছে পিছে আসে;
নদী নাকি?
নদী, তুমি কোন্ কথা কও?’
রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ নদী নিয়ে যেমন রোমান্টিকতায় ভুগেছেন তার বিপরীত চিত্রও বোধকরি কম নেই বাংলাদেশকে ঘিরে। কবি ও কবিতার বাইরে আমাদের জীবন, সাহিত্য, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির সর্বস্তরে নদ-নদীর প্রভাব রয়েছে। নদ-নদীর কারণেই আমাদের দেশ সুজলা-সুফলা ও শস্য-শ্যামলা। ইতিহাসের সুদূর অতীত থেকে পৃথিবীতে যত আলোচিত প্রাচীন সভ্যতা রয়েছে তার সবই ছিল নদীকেন্দ্রিক। নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে সহগ্র নগর ও বন্দর। বস্তুত মানবসভ্যতা নদীর কাছে যারপরনাই ঋণী। আমাদের দেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর হওয়ার কারণে এদেশের অধিকাংশ মানুষের জীবিকা অনেকাংশে নদীর ওপর নির্ভরশীল। দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ সরাসরি কৃষিকাজে যুক্ত। অনেকে আবার মৎস চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। দেশের চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনীয় সেচের পানির প্রধান উৎস হিসেবে নদ-নদীগুলোর ভূমিকা অনস্বীকার্য। আঁকাবাঁকা সর্পিল নদীগুলো এদেশের ও দেশের মানুষের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের অবহেলায়, উদাসীনতায়, অপরিচর্যায় ও প্রয়োজনীয় নদী শাসনের অভাবে আমাদের মূল্যবান সম্পদ নদীগুলো ক্রমেই শুকিয়ে মৃত খাল ও মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। নদীগুলো হারিয়ে ফেলছে স্ববৈশিষ্ট্য। উজানের দেশ ভারতের অবিবেচনাপ্রসূত পানি প্রত্যাহার এবং যথাযথ নদী শাসনের অভাবে নদীপথের পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে বর্ষাকালীন সময়ে ভয়াবহ নদী ভাঙনের তীব্রতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রতিবছর নদীর তীরভাঙন ও নিয়মিত বন্যা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলার পাশাপাশি জনগণের জন্য সৃষ্টি করছে অপরিমেয় দুঃখকষ্ট। মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয় দেশের চলমান উন্নয়ন।
বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে বহুকাল ধরেই আমাদের বসবাস। প্রায় প্রতিবছরই এদেশের বিভিন্ন অঞ্চল, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো বন্যার কারণে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশের এ অঞ্চল প্রায় প্রতিবছরই বন্যাকবলিত হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে বন্যা যেন এ অঞ্চলের মানুষের নিত্যসঙ্গী! এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি আগস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বন্যা শুরুর মৌসুম হিসেবে ধরা হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিগত কয়েক বছর ধরে মোটামুটি এপ্রিলের শুরুতেই বন্যা শুরু হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন, নদীর তলদেশ ভরাট, নদীর পাড় দখল, নগরায়ণের ফলে জলাভূমি দখল, গাছপালা ও পাহাড় কাটায় নদীর তলদেশে পলি বৃদ্ধি, সময়মতো বন্যা প্রতিরোধকারী অবকাঠামো মেরামত না করা প্রভৃতি বন্যা সৃষ্টির অন্যতম কারণ বলে বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন। তবে সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, প্রতিবছর সীমান্তের ওপার থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির ফলে নদীর পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করে বন্যার সৃষ্টি করে। বন্যার ফলে বিশেষ করে দেশের উপকূলীয় ও নিম্নাঞ্চল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নদী-নালা, খাল-বিল প্লাবিত হয়ে বন্যার পানি উপচে পড়ে সমতল ভূমিতে। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, স্কুল-কলেজ সবই তখন অথৈ জলে ভাসে। প্রায় প্রতিবছরই অতিরিক্ত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে দেশের অসংখ্য মানুষ। নদীভাঙন ও বন্যার কারণে প্রতিবছর বাস্তুভিটাচ্যুত হয় অসংখ্য পরিবার। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে এ অবস্থায় অপরাপর দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ বন্যার ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্ভোগ থেকে রক্ষার জন্য এখন পর্যন্ত তেমন কোন ফলপ্রসূ উদ্যোগ নিতে পারেনি। বাঁধের মাধ্যমে এ যাবৎ বন্যা নিয়ন্ত্রণের কিছুটা চেষ্টা করা হলেও এ থেকে তেমন কোন সাফল্য আসেনি। চলতি বছরের বন্যার তীব্রতা ও ব্যাপকতা সে কথাই প্রমাণ করে। এবারের বন্যায় প্রায় তিন লাখ হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষিখাত, যা পুরো খাদ্য ব্যবস্থাপনার হিসাব পাল্টে দিয়েছে। বন্যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, একে শতভাগ রোধ করা সম্ভব নয় সত্য। কিন্তু পরিকল্পিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এর ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা অসম্ভব না।
বন্যার মতো নদীভাঙন বাংলাদেশের একটি পুনঃসংঘটিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রতিবছরই নদীভাঙনের শিকার হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে নতুন আশ্রয়ের খোঁজে দেশ-দেশান্তরে ঘুরে বেড়ায়। নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে ভাঙনের ফলে বসতভিটার সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রতিবছর নদীভাঙন ঠেকানোর জন্য ড্রেজিং পদ্ধতি অনুসরণ করে করতে গিয়ে সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে। কিন্তু এটা তেমন কোন কাজে আসে না। বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করার পর দেখা যায় প্রতিবছর যথারীতি মানুষ নদীভাঙনের শিকার হচ্ছে। চোখের সামনে তাদের ভিটামাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মুহূর্তের মধ্যে সব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ। ড্রেজিং বিষয়ে দেশের নদী বিশেষজ্ঞগণ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে সরকারকে পরামর্শ দিলেও কর্তৃপক্ষ তাতে কর্ণপাত করেনি। ফলে ফলাফল যা হওয়ার তাই হচ্ছে। প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা পানিতে যাচ্ছে! মূলত প্রচুর পরিমাণে পলি জমার কারণে ড্রেজিং পদ্ধতি আমাদের দেশে কোন কাজে আসে না। কর্তৃপক্ষকে কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে পরিবেশ ও বাস্তবতা থেকে ধারণা নিতে হবে। সবার আগে নদীগুলোর প্রবাহমান চরিত্র বুঝতে হবে। সব নদীর বৈশিষ্ট্য এক নয়। কোন নদী খরস্রোতা, আবার কিছু নদী আছে যাদের প্রবাহ সারাবছর একই রকম থাকে। এছাড়া বৈশিষ্ট্যগত ভিন্নতার কারণে সকল নদী সমপরিমাণ পলি ধারণ করে না। কোন নদী বেশি পলি ধারণ করে। আবার কোনটা একেবারেই কম। পদ্মা, যমুনা ও তিস্তার মতো বড় নদীগুলো সবচেয়ে বেশি পলি ধারণ। ফলে এসব নদীর ভাঙনও তুলনামূলকভাবে একটু বেশি। এসব বড় নদীগুলোর একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে পলি ধারণ করে। তাই এসব নদীর ক্ষেত্রে নদীশাসন একটা গুরুত্বপপূর্ণ বিষয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী নদী শাসন সম্ভব হলে বন্যা ও নদী ভাঙনের হাত থেকে অনেকাংশে যেমন রক্ষা পাওয়া যাবে তেমন নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা পাবে। তবে এক্ষেত্রে নদীর বৈশিষ্ট্যকে সমুন্নত রেখে তাকে ব্যবহার উপযোগী করা খুব জরুরি। বিপুল পরিমাণ পলি জমার কারণে যেহেতু নদীগুলোর পাড় ভাঙে, সেহেতু আমাদের নদীশাসনের প্রধান কাজ হওয়া উচিত লোকালয় থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে নদীর যে অংশে বেশি ভাঙে সে অংশে নদীর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পাড় সংরক্ষণ করা। এর পাশাপাশি নদীতীরবর্তী মানুষদের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা (জিবিএম) নদী ব্যবস্থার বাইরে ভারত-বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম আন্তঃসীমান্ত নদী হলো তিস্তা। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সার্বিক কৃষি খাত তিস্তার পানিপ্রবাহের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। উজানের দেশ হওয়ার সুবাদে দুদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ৫৪টি আন্তর্জাতিক নদীর অধিকাংশের পানিই একতরফাভাবে ভারত প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক অভিন্ন নদী নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ১৯৯৮ সালে ভারত বাংলাদেশ থেকে ৬০ কিলোমিটার উজানে সিকিমের গজলডোবায় তিস্তা নদীর ওপর একটি বাঁধ নির্মাণ করে। এ বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ভারত তিস্তার পানির ৮৫ শতাংশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। যে তিস্তা দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে পাঁচ থেকে আট হাজার কিউসেক পানি প্রবাহিত হতো, সেখানে এখন শুষ্ক মৌসুমে এসেছে মাত্র পাঁচশ কিউসেক। বর্তমানে তিস্তায় পানি সংকটের কারণে বোরো আবাদি কৃষকরা ঠিকমতো চাষাবাদ করতে পারেন না। উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম নদী হিসেবে পরিচিত অনন্ত যৌবনা তিস্তা এখন অপমৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে। তিস্তার ভারতীয় অংশে ব্যারাজ নির্মাণ করায় শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে পানির প্রবাহ ভীষণভাবে কমে গেছে। কিন্তু উজানে বন্যা হলে ভারত এ বাঁধের গেট খুলে দেয়। ফলশ্রুতিতে দেখা যায় প্রতিবছর বাংলাদেশের তিস্তার দুকূল প্লাবিত হয়ে বিস্তীর্ণ এলাকায় ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি করে। অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টনে ন্যায়ভিত্তিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন গঠন করা হয়। কিন্তু ভারতের কর্তৃত্ববাদী মনোভাবের কারণে এ কমিশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। ভারতের একতরফা নদী শাসন, খরা মৌসুমে তীব্র খরা, বর্ষায় দুকূল উপচিয়ে বন্যা, অপরিকল্পিতভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করাসহ নানা কারণে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা অববাহিকায় সার্বিক কৃষি খাত ও জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির সম্মুখীন। এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক কাঠামো বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে উজানে বাঁধের কারণে নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বিঘিœত হওয়ায় বাংলাদেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলজুড়ে যে মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য তা নিঃসন্দেহে অশনি সংকেত।
মরুকরণের কুপ্রভাব ইতোমধ্যে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক ক্ষতিসাধনের পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশকে ভারসাম্যহীন করে তুলছে। ভারতের একতরফাভাবে বাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহারের কারণে উত্তরাঞ্চলের পদ্মা, যমুনা, করতোয়া, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তার মতো প্রমত্তা নদীতে এখন পর্যাপ্ত পানি নেই। এদের শাখানদীগুলোর অবস্থা আরও করুণ। কিছু মরে শুকিয়ে গো-চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে! ভূগর্ভের পানির স্তর স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক নিচে নেমে গেছে। ফলে এ অঞ্চলের গভীর ও অগভীর নলকূপ দিয়ে চলতি ইরি-বোরো ধানের সেচ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান লবণাক্ততার কারণে শিল্পের ওপর হুমকি সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় কৃষিজমি ধ্বংস হচ্ছে। পলির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় নদনদীর নাব্য কমে যাচ্ছে। মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী সহসাই বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দারিদ্র্যপীড়িত উত্তরাঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা, এ অঞ্চলের মানুষের রুটি ও রুজির বিষয় বিবেচনা এবং দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো সুদৃঢ় করতে জরুরি ভিত্তিতে এখনি তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি সই তা পরিপূর্ণভাবে কার্যকর করা জরুরি। তা না হলে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে জনজীবন বিপন্ন হওয়ার পাশাপাশি প্রাকৃতিক ভারসাম্য যে মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়বে তা সহজেই অনুমেয়।
বাংলাদেশ উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে নদ-নদী দ্বারা প্রভাবিত। তাই এ অঞ্চলের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এ অঞ্চলের নদ-নদীর গতিপথ স্বাভাবিক রাখা খুব জরুরি। ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও নদী শাসনের মাধ্যমে নদীর প্রবাহ সচল করার জন্য সরকারকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। এছাড়া ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশের জন্য যে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করছে তা সমাধানে সরকারকে তৎপর হতে হবে। প্রয়োজনে এ সমস্যাটি আন্তর্জাতিক ফোরামে উত্থাপন করা যেতে পারে। ভারতের এই পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক তৎপরতা এখনই যদি জোরদার করা না হয় তাহলে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। উত্তরাঞ্চলের মৃতপ্রায় নদীগুলোকে বাঁচাতে নদীগুলোর যথাযথ পরিচর্যা, নদীশাসন ও সব ধরনের আগ্রাসন বন্ধ করে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে সংশ্লিষ্টদের অধিক উদ্যোগী হওয়ার এখনই সময়। অন্তত নদী বাঁচলে বাঁচবে স্বদেশ, এমন ভাবনা থেকে হলেও নদীরক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে আমাদের। পাশাপাশি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল নিয়ে যখন চিন্তা করা হবে তখন নদীকে আরেকটু অন্যরকম গুরুত্ব দিতেই হবে। কারণ এখানকার জনপদ, বসতি ও জনজীবন পরোক্ষ নয়, প্রত্যক্ষভাবে নদীর ওপর নির্ভরশীল।

Thursday, 16 November 2017

সংখ্যালঘু নির্যাতন : ধর্মীয় উগ্রবাদ বনাম সম্প্রীতির বন্ধন

বহির্বিশ্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে আমাদের একটা প্রশংসা আছে। হাজার বছর ধরে এ অঞ্চলের মানুষেরা মিলেমিশে বসবাস করে আসছে। ধর্মীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে ওঠে বিপদে আপদে একে অন্যের পাশে দাঁড়ানোর বহু নজির আছে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও নৈতিক স্খলনের ফলে সামাজিক সম্প্রীতির এ বন্ধন যেন দিন দিন হারিয়ে যেতে চলছে। মানুষের মধ্যে এখন অস্থিরতা বিরাজ করছে, অতি অল্পতেই একজন অন্যজনকে শারীরিক বা মানসিকভাবে আঘাত করছে। দুঃখজনক, আধুনিক এই যুগে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষা দীক্ষা প্রসারের ফলে মানুষের মাঝে নীতি-নৈতিকতা, সামাজিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা থাকলেও উদ্বেগজনকভাবে কমে যাচ্ছে! মূল্যবোধ অবক্ষয়ের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সমাজ ও রাষ্ট্রে।
সম্প্রতি রংপুরের সদর উপজেলার পাগলাপীর ঠাকুরবাড়ি গ্রামে ফেসবুকে এক হিন্দু ছেলের কথিত একটি স্ট্যাটাসে ইসলাম ধর্মের অবমাননার অভিযোগে সেখানে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে একদল ধর্মীয় উগ্রবাদী। তারা হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দিয়ে ইচ্ছামতো লুটপাট করেছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানতে পারলাম, উগ্রবাদীদের দেয়া আগুনে গ্রামের প্রায় ৩০টি হিন্দু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে বসবাসরত শত শত হিন্দু পরিবার এখন আছে নিরাপত্তাহীনতায়। আবারও হামলার আশঙ্কায় চরম আতঙ্কের মধ্যে আছেন তারা। ধর্ম রক্ষার নামে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার এ এক নগ্ন খেলা। সংখ্যালঘুদের ওপরে হামলা, নির্যাতন, তাদের উপাসনালয়-প্রতিমা ভাঙচুর, ঘরবাড়ি-দোকানপাটে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা নতুন না। তাদের জায়গা-জমি দখল করা কিংবা স্বল্পমূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য করার মতো অভিযোগও অনেক পাওয়া যায়। প্রতিনিয়ত দেখে আসছি যে, কারণে অকারণে সহিংস নির্যাতনের শিকার হন আমাদের দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষরা। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রামুতে এক বৌদ্ধপল্লীতে একই অভিযোগ তুলে সেখানে ব্যাপক সংহিসতা চালিয়েছিল উগ্রবাদীরা। উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী রামুর ১২টি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার ও ৩২টি বসতঘরে অগ্নিসংযোগ করেছিল। এ সময় আরও ছয়টি বৌদ্ধ বিহার ও শতাধিক বসতঘরে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছিল। পরদিন উখিয়া-টেকনাফে আরও কয়েকটি বৌদ্ধ বিহার ও বসতিতে একই ঘটনা ঘটেছিল। রামুর ক্ষত না শুকাতেই গত বছর (২০১৬ সালের ২৮ অক্টোবর) একই অভিযোগে আবার ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক পরিবার এবং তাদের মন্দিরের ওপর হামলা চালায় মৌলবাদী গোষ্ঠী। কিন্তু কেন এমন ধারাবাহিক হামলা? রাষ্ট্র অবশ্যই এ প্রশ্নের দায় এড়াতে পারে না। ফেসবুকে আপত্তিকর স্ট্যাটাস দিয়ে যদি কেউ অপরাধ করে দেশের প্রচলিত আইনে তার সাজা হোক। তাই বলে একজনের অপরাধে তার সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের ঘরবাড়িতে হামলা করে আগুন ধরিয়ে মালামাল লুট করতে হবে, এটা কেমন অবিচার?
একের পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় মনে প্রশ্নে জাগে, সংখ্যালঘুরা কি রাষ্ট্রের নাগরিক নয়? স্বাধীনভাবে কি এরা এদেশে বসবাস করতে পারবে না? এদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব কি রাষ্ট্রের ওপর বর্তায় না? হলফ করে বলতে পারি রামু, উখিয়া, নাসিরনগরের ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে যারা প্রকৃত দোষী ছিল তাদের যদি যথাযথ বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হতো তবে এসব নোংরা ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটত না। কিন্তু ভোটের রাজনীতিতে কেউ-ই দায় নিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষায় তৎপর হওয়ার আগ্রহ পায় না। আর এই দায়হীনতার সংস্কৃতি থেকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রভাবিত বিচার ব্যবস্থায় কোনো ঘটনাকে যদি রাজনৈতিক রূপ দেয়া যায় তাহলে তা যতই ক্ষমার অযোগ্য হোক না কেন, সুবিচার পাওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়ে।
‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’ বাংলা ভাষায় প্রচলিত একটা জনপ্রিয় প্রবাদ। আমাদের দেশের ধর্মান্ধদের দৃষ্টিতে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় যেন নন্দ ঘোষ! গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন একপ্রকার উৎসব। ভোটাধিকার প্রতিটি নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকার। কিন্তু দেখা যায়, জাতীয় নির্বাচন মানেই হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য আতঙ্ক। নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতার শিকার হন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষগুলো। অধিকাংশ সময় স্বাধীনভাবে তারা ভোটাধিকার পর্যন্ত প্রয়োগ করতে পারেন না। কোথাও তারা কোনো প্রার্থীকে ভোট দেয়ার অভিযোগে নির্যাতনের শিকার হন, কোথাও তাদের ওপর আক্রমণ আসে কোন প্রার্থীকে ভোট না দেয়ার অভিযোগে। এ যেন জলে কুমির ডাঙায় বাঘ অবস্থা। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে। আদালতের বিচারে যুদ্ধাপরাধীদের কয়েকজনের ফাঁসি কার্যকর হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেও এক শ্রেণীর মৌলবাদী গোষ্ঠী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালায়। অথচ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সাথে কিন্তু সংখ্যালঘুদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। বিভিন্ন সময় দেশের ভিতরে কিংবা দেশের বাইরের বিভিন্ন ইস্যুকে (বাবরি মসজিদে হামলা) কেন্দ্র করে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এটা বহু রক্তের বিনিময়ে পাওয়া মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের চেতনার বিচ্যুতির প্রমাণ।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাই ছিল অসাম্প্রদায়িক ও শোষণমুক্ত একটা রাষ্ট্র গড়ার। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পরও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ আজও প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। ফলে দেশে সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিরাপত্তার অভাব বোধ থেকে অনেক সংখ্যালঘু পরিবার নীরবে দেশ ত্যাগ করেছেন। কেউ স্বীকার করুক আর না করুক নাগরিক হিসেবে পূর্ণ অধিকার নিয়ে থাকতে না পারা এবং জানমালের পূর্ণ নিরাপত্তা না পাওয়ার কারণেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায় দেশ ত্যাগ করছেন। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, স্বাধীনতার চার দশকের মধ্যে দেশে জনসংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেলেও মূলত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সংখ্যা কমেছে। অনেকে বলেন, সংখ্যালঘুদের জন্মহার কম হওয়ার দিন দিন সংখ্যা কমে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলে। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই সংখ্যালঘুরা দ্রুত দেশত্যাগ শুরু করেন। সেই ধারা এখনো অব্যাহত আছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, স্বাধীনতার সময় এদেশে সংখ্যালঘুদের হার ছিল ২০-২১ ভাগ। কিন্তু বর্তমানে এই হার কমে এখন ৯.৭ শতাংশ।
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে একটা অপশক্তি দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা শুরু করেছে। এরা আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সম্পর্ককে বিনষ্ট করে আস্থার সংকট সৃষ্টি করতে চায়। উগ্রসাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী নির্যাতন ও অত্যাচারের মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগে বাধ্য করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়িত করার জন্য যে কোন মূল্যে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে ওঠে যারা এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি আমাদের ভুলে গেলে চলবে না ধর্মনিরপেক্ষ একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে আমাদের যে হাজার বছরের ঐতিহ্য আছে সেই সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রাখতে দেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধের কোনো বিকল্প নেই।

Saturday, 11 November 2017

Saudi Arabia and Iran: Regional power conflicts and Qatar crisis

The Saudi-led Arab alliance's blockade on Qatar is going on for nearly five months. The Saudi alliance has imposed sanctions against Qatar on backing of terrorism. Qatar has always denied the allegation. Although different diplomatic activities were targeted at different times to resolve the Qatar crisis, it did not see the light of Saudi Arabia and Iranian regional conflict.
Qatar's huge amount of financial assistance to the reconstruction of hamas-controlled Gaza, cooperation to the Muslim Brotherhood, Qatar-based news media Al-Jazeera's Israel policy and the United States anti-alignment, Turkish military based in Qatar and Qatar's economic prosperity are the main reasons for unprecedented diplomatic and commercial sanctions by Saudi Arabia and neighbouring Arab countries according to international political analysts.
General CC took the power by overthrowing elected Egyptian President Mohamed Morsi and started torture and repressive treatment of supporters of the Muslim Brotherhood. Qatar gave shelter to Brotherhood leaders and supporters who left the country for the torture of General Sisi. Besides, Qatar's relations with Saudi Arabia have cooled down on 'Hamas'. Saudi Arabia is trying their best to keep Qatar in its borders, one of which is to stop supporting the Palestinian liberation movement Hamas. Qatar has spent billions of dollars in building new homes, hospitals and roads in the Gaza Valley in recent years.
Early on the Saudi alliance presented a 13-point demand for normalizing relations with Qatar and the condition of withdrawal of the blockade. Among those claims -- the reduction of relations with Iran, the severing of ties with the Muslim Brotherhood and Hamas, to stop financial assistance for those who have declared terrorist organizations by the Saudi alliance and the United States of America, the Qatar-based Al-Jazeera channel shutdown are noteworthy. Many of the conditions provided by the Saudi alliance are contrary to Qatar's national interest. As a result Qatar did not accept the unreasonable demand of the Saudi alliance.
Qatar, however, did not accept the demand for closure of Al Jazeera. In a recent interview with the US media CBS television, Qatar's Amir Sheikh Tamim said Al-Jazeera's broadcast will not be closed. It can be assumed Qatar will not even stop the military base of Qatar for the sake of Qatar's security. Qatar will not lose relations with Iran for its own security. Qatar's Amir Sheikh Tamim again called on Saudi Arabia to negotiate to ease the ban of four Arab neighbours. Now the issue is to see whether the opponent responds to this call at all or the ongoing crisis exists.
However, due to the blockade of the Saudi alliance against Qatar, Gaza people will be in trouble. Claiming that the 2014 Israeli strike in Gaza, mainly with the financial support of Qatar, Hamas was restructuring their regime. Qatar pledged to provide USD 1 billion in aid there.
In the news release by December 2016, nearly one-fifth of its promised support was given. Meanwhile, Saudi Arabia's recent blockade has put Qatar at risk itself. Following they will be forced to cut the support given in Gaza. This proximity to Qatar with Hamas is believed to be the root cause of Saudi-Qatar conflicts.
As a result, Israel will be the main beneficiary of this blockade. Qatar will now be forced to talk to Israel under pressure. And the ostensible facilities for Hamas have already been minimized. It is easy to imagine, Israel is being most privileged because of the blockade of the Saudi alliance.
It is believed that the strong relationship between Qatar and Egypt's Muslim Brotherhood is one of the reasons for this ongoing conflict. Brotherhood opponent General CC of Egypt is specially supporting this blockbuster only for his sake. He is angry at the role of Qatar's al-Jazeera. Al-Jazeera had publicized the torture that General CC had played while taking power against the Brotherhood's staff irrespective of male and child.
Alongside 'Arab Spring' - there is no opportunity to deny Al Jazeera's encouraging role during the period. Outside of this, the news media spreading the news about the internal situation in Egypt is what the military junta is all about.
On the other hand, the channel has directly presented the malfeasance documents of the Saudi royal family in front of the world. Due to these reasons, the rage of Saudi Arabia has risen on Qatar and their channel.
Not too long ago, many civilians were killed in a funeral of throwing a Saudi bomb. This news was telecasted by the al-Jazeera. In fact, there is no scope to deny Al Jazeera's role in creating opportunities for freedom in the free media of the Middle East and the Gulf. Everybody in the world knows that Saudi Prince Salman and Abu Dhabi's Prince Zayed gave special support to General CC and the country's military forces in ousting the Muslim Brotherhood in Egypt's democratic government.
So, there is nothing to say about it that they will go directly against Qatar. Meanwhile, Saudi Arab has failed to expect obsequiousness behaviour from Qatar like Bahrain. As well as Qatar's independent foreign policy gave birth to concerns among them.
The Saudi alliance creates anti-Qatar blockade at a time when the country is busy preparing for the 2022 World Cup Football Tournament. They think that the amount of damage will increase further and they will be under pressure. But the change in the Middle East's geo-politics in the aftermath of the Arab Spring is the indirect result of this blockade. There is still a lot of incident to do in this play.