Tuesday, 19 May 2020

করোনাকালে মধ্যবিত্ত এবং সমাজের অমানবিকতা

চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে ইতিমধ্যে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে। মহামারি করোনা ভাইরাসের আক্রমনে পুরো মানবজাতি এখন বিপন্ন এবং বিপদগ্রস্ত। এ পর্যন্ত (১৮/০৫/২০২০- ) এই ভয়ংকর ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে ৩,১৭,২০০ জন ব্যক্তি মারা গেছেন এবং ৪৮,৩০,২৯৬ জন ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। মার্চ মাসে বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ার পর থেকে আমাদের দেশেও প্রতিদিন আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির মেয়াদ কয়েক দফা বাড়িয়ে এখনো চলছে। মানুষের জীবন- জীবিকা বলতে গেলে একপ্রকারে স্থিতাবস্থা। এই ভয়ংকর মহামারির মধ্যে যারা সু-স্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে আছেন, অর্থনৈতিক সংকটে তাদের অধিকাংশের অবস্থাও নাজুক। বিত্তবানরা ঘরবন্দি হয়ে জীবনযাপনে সমর্থ হলেও, সীমিত আয়ের নিম্নবিত্ত, অসহায় ও দুঃস্ত মানুষগুলোর পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও আছেন ভীষণ বিপদে। দীর্ঘদিনের লডডাউনে কর্মহীন অবস্থায় থাকায়, অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায়, অনেকে অর্ধেক বেতন পাওয়াই কিংবা চাকরিচ্যুত হওয়াই জীবনধারণ করাই এখন তাদের জন্য দিনেদিনে অসম্ভব হয়ে উঠছে। চরম অর্থনৈতিক এই সংকটের মধ্যে নগরবাসীর বাসা ভাড়া, গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল, পানি বিল, নেট বিল, ডিস লাইনের বিল পরিশোধের এ জাতীয় উদ্বেগের সাথে পারিবারিক কলহ, সন্তানসন্ততির অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ চিন্তা সবমিলিয়ে দুর্বিষহ করে তুলছে বেঁচে থাকার স্বাদ। নগরবাসীর উপর সরকার নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধের আপাতত চাপ না থাকলেও বাসা ভাড়া পরিশোধের চাপ রয়েছে যথারীতি। এই চরম দুর্যোগকালেও বাড়ির মালিক ভাড়াটিয়ার কোন প্রকার সমস্যা শুনতে নারাজ!
মহামারি করোনা ভাইরাসের ফলে সৃষ্ট এই সংকটে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে, তবে সেগুলোর সবই নিম্নআয়ের মানুষের জন্য। বিত্তবানদের তরফ থেকেও এ পর্যন্ত যে সাহায্য সহযোগিতা করা হয়েছে এবং ঈদকে সামনে রেখে যাকাতের অর্থ বণ্টনের যে পরিকল্পনা করা হচ্ছে সেখানেও সমাজের মধ্যবিত্তের কোন স্থান নেই। মধ্যবিত্তদের অর্থ- বিত্ত না থাকলেও আত্মসম্মান খুবই স্পর্শকাতর ইস্যু, ফলে চরম দারিদ্র্যতার মাঝেও আত্মসম্মানের ভয়ে সরকারি রিলিফের খাতায় তারা কেউ নাম লেখাতে পারেন না। কেউ যদি চরম অসহায়ত্ব স্বীকার করে বাধ্য হয়ে দুঃস্থদের সাথে ত্রাণের লাইনে দাঁড়ান, আমাদের চারপাশ তা সহজে মেনে নিতে পারে না। বিভিন্ন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এই হচ্ছে সমাজে মধ্যবিত্তের বাস্তব চিত্র।
মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা এক প্রকার ভেঙে পড়ছে। ভয়াবহ সংকটজনক সময় পার করছে বিশ্বের প্রতিটি দেশ। গবেষণা বলছে, চলতি বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে। অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্ষতির পরিমাণ ১৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। সুতরাং খুব সহজেই অনুমান করা যায়, বর্তমানের মতো করোনা পরবর্তী সময়ও আমাদের জন্য খুব একটা সুখকর হবে না। টিকে থাকার লড়াই নিঃসন্দেহে চরম প্রতিযোগিতাপূর্ণ হবে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না অস্তিত্ব লড়াইয়ের এ প্রতিযোগিতা হতে হবে অবশ্যই পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে। আর এর জন্য সবার অনেক বেশি মানবিক হওয়া দরকার। পারস্পরিক সাহায্য ও সহযোগিতার মাধ্যমেই এই সংকট দূর করতে হবে। কিন্তু আমাদের চারপাশে বাস্তবে কী ধরনের ঘটনা ঘটছে?
করোনাকালে রাজধানীর ধানমন্ডির কাঠালবাগান এলাকায় সামান্য এক মাসের ভাড়া দিতে না পারায় ঝড়ের রাতে তিন শিশুসহ এক দম্পতিকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন বাড়ির মালিক। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপেও বাড়ির মালিক দমে জাননি! বরগুনায় বাস চালক মোঃ ফারুক এক মাসের বাসা ভাড়া পরিশোধে ব্যর্থ হওয়াই তার ঘর থেকে রান্নার চাল নিয়ে গেছে বাড়ির মালিক! আবার বগুড়ায় ভাড়া দিতে না পারায় সরকারি আজিজুল হক কলেজের পাঁচ ছাত্রীকে আটকে রেখেছেন মেস মালিক। এমন অসংখ্য অমানবিক ও বিব্রতকর ঘটনা চারপাশে ঘটছে ; কিছু ঘটনা সামাজিক ও গণমাধ্যমের কল্যাণে জানা যাচ্ছে, এমন অনেক ঘটনাই থেকে যাচ্ছে সবার অগোচরে।
রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে যেসব ভাড়াটিয়া বসবাস করেন এদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত পরিবার। এদের অধিকাংশই হয়ত চাকরি, নয়তো ছোটখাটো ব্যবসা করেন। আবার শহরে আরেকটা শ্রেণীর মানুষ ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন যারা শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া, নয়তো বেকার। এদের কোন শ্রেণীতে ফেলবো ঠিক বুঝতে পারছি না। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত এসব যুবক- যুবতীর অনেকেই পার্ট- টাইম জব করে অথবা টিউশনি করে নিজের খরচ জোগানোর পাশাপাশি পরিবারকেও সহায়তা করেন। কিন্তু করোনাকালে তাদেরও সকল জীবিকার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে আর্থিক সংকটের কারণে অনেকেই বাসা বা মেস ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন। অনেকে নিরুপায় হয়ে হয়ত মেসের মাসিক বিল কিংবা বাসা ভাড়া দিতে অপারগ হচ্ছেন। কিন্তু তাই বলে তাদের বাসা থেকে অপমান করে বের করে দিতে হবে? এ কোন ধরনের অমানবিক আচরণ, এটা কোন ধরনের অসভ্যতা? এই মহামারির সময়েও যদি মানুষের মনুষ্যত্ব না জাগে তাহলে আর কবে জাগবে? অমানুষ থেকে মানুষ হয়ে উঠার এখনই তো উত্তম সুযোগ।
রাজধানীসহ অন্যান্য শহরগুলোতেও বাড়ির মালিকদের আচরণ অনেকাংশে কর্তৃত্ববাদী। বাসা ভাড়া দেয়ার পরও ভাড়াটিয়াদের জন্য বাড়ির মালিকদের হাজারটা অলিখিত নিয়ম। এছাড়া বছর শেষে কারণে- অকারণে বাসা ভাড়া বৃদ্ধির নির্ধারিত যন্ত্রণা তো আছেই। আর ব্যাচেলর হলে তো মরার উপর খড়ার ঘা। তবুও মানুষ একটু মাথা গুঁজার জন্য নিরুপায় হয়ে বাড়ির মালিকদের সকল অন্যায় আবদার নিরবে সহ্য করে। দেশে বাসা ভাড়া সংক্রান্ত আইন থাকলেও বাড়ির মালিক তা থোরায় কেয়ার করেন। ভাড়াটিয়াও আইনের আশ্রয়প্রার্থী হওয়া এক প্রকার ঝামেলা মনে করে বাসার মালিকের বিরুদ্ধতা না করে সব কিছু মেনে নিয়ে বসবাস করেন। কিন্তু বাড়ির মালিকদের এই নিরব অত্যাচার আর কতদিন চলবে? তবে এত অভিযোগের মাঝেও কিছু বাসার মালিক আছেন যারা খুব মানবিক এবং ভাড়াটিয়ার বিপদে পাশে দাঁড়ান।
অস্বীকার করবো না অনেক বাড়ির মালিকের পরিবার শুধু বাড়ি ভাড়ার ওপরেই নির্ভরশীল। তাদের অনেকেই ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। ভাড়ার টাকা দিয়ে নিয়মিত ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধ করেন। এমতাবস্থায় ঋণগ্রস্ত বাড়ির মালিকদের উপরও একটা অর্থনৈতিক চাপ আছে। কিন্তু তাই বলে কি তারা অমানবিক আচরণ করবে? আর অমানবিক আচরণ করলেই কি সমস্যার সমাধান হবে?
করোনাকালীন অধিকাংশের সার্বিক দুরবস্থা বিবেচনা করে এ জাতীয় সমস্যা সমাধানে সরকারকে দ্রুত বাস্তবসম্মত ও যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে এ জাতীয় সমস্যা বাড়তেই থাকবে। বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়া উভয়পক্ষের সুবিধার কথা চিন্তা করে সরকার এই সংকটকালে বাসা ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে পুনর্নির্ধারণ করতে পারে। এক্ষেত্রে বাড়ির মালিকদের বাসা ভাড়ার বিষয়ে খুব বেশি মানবিক হওয়া দরকার। আর সরকার এই দুর্যোগকালীন নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত বাড়ির মালিকদের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করে দিতে পারে। এছাড়া যেসব মালিকদের ব্যাংক ঋণ আছে তাদের ব্যাংক ঋণের কিস্তি নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত সুদ মুক্ত অবস্থায় স্থগিত করতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে আদেশ দিতে পারে। এছাড়া বাসা বাড়িতে সরকারি বিভিন্ন সেবার কয়েকমাসের বিল সরকার মওকূপ করতে পারে। এতে মানুষের ওপর অনেকাংশে অর্থনৈতিক চাপ কমবে। সমস্যা সমাধানে আন্তরিকার সাথে সবাইকে এগিয়ে আসার এখনই সময়।
"সকলের তরে সকলে আমরা/ প্রত্যেকে মোরা পরের তরে ”।
--- দুর্যোগকালীন এই সময়ে মানবিক বোধ সবার মধ্যে জেগে উঠুক।

Thursday, 14 May 2020

মহামারি করোনা ভাইরাস, প্রকৃতি এবং মানুষ


একটু লক্ষ্য করে দেখেন, আমাদের জীবনযাত্রার সাথে- সাথে পাল্টে যাচ্ছে পুরো পৃথিবীটা। দীর্ঘমেয়াদী লক ডাউনে এক প্রকার স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। যান্ত্রিক নগরীতে মানুষের কোলাহল কমেছে। দীর্ঘ যানজটের দেখা নেই কয়েকমাস, যানবাহনের বিষাক্ত কালো ধোঁয়া কমেছে বহুগুণে। কয়েকমাস কল- কারখানাগুলো বন্ধ থাকায় বায়ু দূষণ কমেছে। গাড়ির অপ্রয়োজনীয় হর্ণের অসহ্য প্যাপু শব্দের সাথে সাথে থেমে গেছে রিক্সার ক্রিং ক্রিং কর্কট শব্দ। যে নগরীর দিন শুরু হতো ছুটে চলার মধ্যদিয়ে, এখন অলস সময় পার করছে। পাল্টে গেছে নগরের, নগরীর মানুষের চিরচেনা রূপ। এ পরিবর্তন যেন অনেকটা স্বপ্নের মতো!
চারদিকে এখন শুধু সবুজের সমাহার, প্রকৃতি সেঁজেছে তাঁর আপন সাঁজে। সমুদ্রে ডলফিনকে খেলা করতে দেখা যাচ্ছে, সুন্দরবন এলাকায় রাস্তায় হরিণ বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেন্টমার্টিনে কচ্ছপ সমুদ্রকূলে ডিমে পেড়ে নিরভিগ্নে আবার সমুদ্রে ফিরে যাচ্ছে, কুয়াকাটায় লাল কাঁকড়ার আলপনা আকার দৃশ্য, গাছে- গাছে নানা রঙের ফুল, চারদিক মুখরিত পাখির কিচিরমিচির ডাকে, নদীগুলো ক্রমশ হারানো যৌবন ফিরে পাচ্ছে, নগরীর কোলাহলের পরিবর্তে চারপাশে সুনসান নিরবতা। করোনাকালে নিরুদ্বিগ্ন প্রকৃতি দিনেদিনে ফিরে পাচ্ছে তাঁর হারানো সৌন্দর্য। চারপাশে চোখ ধাঁধানো নৈসর্গিকতা।
একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুন, এই আমরা, মানবজাতি প্রকৃতির উপর কী অত্যাচারটাই না এতদিন করছি! সবারই সহ্য, ধৈর্যেরও তো একটা সীমা থাকে। আমাদের প্রাত্যহিক অত্যাচার ও নির্মমতা প্রকৃতিকে দিনেদিনে ক্ষেপিয়ে তুলেছে। বাস্তুতন্ত্র ভেঙে পড়েছে। কে জানে প্রকৃতির এই ভারসাম্যহীনতার জন্যই হয়ত করোনার মতো ভয়ংকর ভাইরাসের সৃষ্টি। অদৃশ্য এক শক্তি যা গোটা বিশ্বের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে। প্রকৃতির কী বিচার, চায়না, যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ডসহ যেসকল দেশের কারণে জলবায়ু সবচেয়ে বেশি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেসব দেশই এখন সবচেয়ে বেশি করোনার শিকার। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি কোন কিছু করোনার বিস্তার ঠেকাতে পারছে না। এটা মানবজাতির জন্য প্রকৃতির এক সর্তক বার্তা।
মানুষ ভুলে গিয়েছিল স্রষ্টার সৃষ্টি সুন্দর এই গ্রহটার উপর তাদের পাশাপাশি অন্যান্য প্রাণীদেরও অধিকার আছে। আজ অত্যাচারীদের দল ঘরে বসে হা-হুতাশ করছে। অন্যদিকে নির্যাতিত শ্রেণী বাইরে আনন্দ উল্লাস করছে। মানুষ ভেবেছিল এই পৃথিবীর সবকিছু যাচ্ছেতাই ভাবে তাদের ভোগের অধিকার আছে। কিন্তু আসলে যে তা নেই এখন ভালোভাবে বুঝতে পারছে। প্রকৃতিতে ভারসাম্য বজায় রেখে যে সবকিছু ভোগ করতে হয়, ভোগের সময় মানুষ এই কথাটা মনে রাখে না। ইচ্ছে হলেই মানুষ বৃক্ষ নিধন করে, করকারখানার নোংরা দূষিত ময়লা নদীতে ফেলে জল দূষণ করে, নদী দখলে নিয়ে ভরাট করে শিল্প- কারখানা গড়ে তোলে, যেখানে সেখানে প্লাস্টিক ময়লা আর্বজনা ফেলে মাটি দূষণ করে, ইচ্ছে হলেই বিরল প্রজাতির কোন প্রাণী ধ্বংস করে, জবাই করে খেয়ে ফেলে, গাড়ির হর্ণ চেপে বসে থাকে, ইটভাটায় গাছ কেটে ইট পোড়ায়, বনাঞ্চলে আগুন ধরিয়ে দেয়, মানগ্রোভ বনাঞ্চলের আশেপাশে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তুলে পরিবেশ বিপন্ন করে--- মানুষের এমন অবিবেচনাপ্রসূত অন্যার ইচ্ছার কোন শেষ নেই! এই মহামারি করোনা ভাইরাস মানুষের জন্য একটা শিক্ষা। কিন্তু মানুষ কি এ থেকে কোন শিক্ষা গ্রহণ করবে? মহামারি শেষ হলে কি মানুষ প্রকৃতির প্রতি সদয় হবে? মনে হয় না, কারণ এই মহামারির মধ্যে মানুষের হিংস্রতা কমেনি। কয়েকদিন আগেও রাউজানের উরকিরচর ইউনিয়নে হালদা সংলগ্ন এলাকায় একটি বিরল প্রজাতির একটা ডলফিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মাদারীপুরে খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে ১৫টি বানরকে  হত্যা করা হয়েছে। তবে এই সংকট থেকেও যদি মানুষ যথাযথ শিক্ষা না নেয়, প্রকৃতির উপর যথারীতি অত্যাচার অব্যাহত রাখে তাহলে ভবিষ্যতে হয়ত এর চেয়েও বড় কোন মহামারি এ পৃথিবীতে ফিরে আসবে। ধ্বংস হবে মানবসভ্যতা।
করোনা ভাইরাস প্রমাণ করেছে অর্থ, বিত্ত- সম্পদ, ক্ষমতা মানুষকে শতভাগ নিরাপত্তা প্রদান করে না। অদৃশ্য এই ভাইরাস এটাও প্রমাণ করেছে নিজে নিজে কখনও ভালো থাকা যায় না। ভালো থাকতে হলে চারপাশের মানুষ ও প্রকৃতিকেও ভালো রাখতে হয়। এতদিনে যারা দেশের সম্পদ লুট করে, দুর্নীতি করে, মানুষকে ঠকিয়ে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন এরাও আজ করোনার ভয়ে স্বেচ্ছায় বাধ্য হয়ে ঘরবন্দি আছেন। অর্থ এবং ক্ষমতা তাদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। অনেক বিত্তবান ও ক্ষমতাধর করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ গ্রহ থেকে এরই মধ্যে বিদায় নিয়েছেন। অদৃশ্য করোনা ভাইরাস ধনী - দরিদ্র,  জাতি- ধর্ম- বর্ণ- শ্রেণী নির্বিশেষে সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করেছে। আমাদের দেশে যেসকল বিত্তশালী, ক্ষমতাবান দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে জোড় না দিয়ে, দেশের উন্নতি না ভেবে সামান্য একটু জ্বর হলেও সিঙ্গাপুর, লন্ডন, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া ও কানাডার মতো উন্নত দেশে উড়াল দিতেন তাঁরা আজ কই? সবারই এখন শেষ ভরসা কিন্তু কুমির্টোলা হাসপাতাল, নয়ত সিএমএইস! প্রকৃতির বিচারের কাছে ভিআইপি কিংবা ভিভিআইপি নেই। প্রকৃতি সবাইকে এক কাতারে দেখতে ভালোবাসে।
যাইহোক, বাংলাদেশে মার্চ মাসে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হয়। এরপর থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। কয়েক দফায় এ ছুটি বাড়ানো হয়েছে। সাধারণ ছুটির দু' মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। লকডাউন কার্যকরী করতে দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, বিশেষ করে বাংলাদেশ পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে কয়েক হাজার পুলিশ সদস্য আক্রান্ত, আক্রান্ত হয়ে কয়েকজন মারাও গেছেন। কিন্তু দুঃখজনক, লকডাউনের দুই মাসের বেশি সময় পার হলেও দেশের জনগনের মধ্যে এখনো তেমন সচেতনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অর্থনীতির কথা বিবেচনা করে সরকারও লকডাউন শিথিল করেছে। ইতিমধ্যে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর অনেক শপিংমলও খুলে দেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় কোন রকম স্বাস্থ্য বিধি- নিষেধ এবং সামাজিক দুরত্ব না মেনে অনেকে অপ্রয়োজনে বাইরে ঘোরাফেরা করে করোনা ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন। ফলাফল প্রতিদিন করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামনে ঈদ উপলক্ষ্যে সরকার যদি লকডাউন আরো শিথিল করে গণপরিবহন খুলে দিয়ে ঈদের ছুটি কাটানোর সুযোগ করে দেয় তাহলে নিশ্চিতভাবে বলা যায় বাংলাদেশের জন্য এর চেয়েও ভয়াবহতা অপেক্ষা করছে। লকডাউন শিথিল করে দফায় দফায় সাধারণ ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে কোন লাভ নেই। এর চেয়ে বরং কঠোরভাবে লডডাউন পালন করে দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। যত দেরি হবে ততই দেশের অর্থনীতির ক্ষতি হবে। সরকার প্রয়োজনে ঈদকে সামনে রেখে সৌদি সরকারের মতন কারফিউ জারি করতে পারে। সৌদি আরবে ঈদের দিনও কারফিউ বহাল থাকবে। ঈদ উদযাপনে করোনা সংক্রমণ যাতে না বাড়ে, তা নির্দিষ্ট করতেই সেদেশের সরকারের এমন পদক্ষেপ৷ বাংলাদেশ সরকারও এটা ভাবতে পারে। সরকারের যদি এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে মনে হয় না দেশের জনগণের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। সরকারকে সবার আগে দেশ ও দেশের জনগণের নিরাপত্তা ভাবতে হবে। আর দেশ ও দেশের জনগণের স্বাভাবিকতার সাথেই অর্থনীতি জড়িত। তাই সরকারকে প্রয়োজনে খুব কঠোর হয়ে করোনা ভাইরাস বিদায় করে যত দ্রুত সম্ভব দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে। আর এই সংকটময় মুহূর্তের চরম শিক্ষা আমাদের কাজে লাগতে হবে। সংকট কেটে গেলে আমাদের অবহেলা ও অত্যাচারে প্রকৃতি যেন আবার প্রাণ হারিয়ে না ফেলে, বাস্তুতন্ত্র যেন বিনষ্ট না হয় সেদিকে আমাদের লক্ষ রাখাই হবে এ জাতীয় সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান।

COVID- 19 in Bangladesh : what’s going on is nothing but dangerous for all



Thousands of people, most of them are garment workers, are rushing back to Dhaka from across the country despite the nationwide shutdown as Bangladesh government has allowed garment owners to open their factories. Due to the ongoing suspension of public transport operation, some workers are to walk hundreds of miles having baby in their lap, some have luggage on head while some use goods-laden vehicles. Due to rush of passengers and lack of vehicles, they are supposed to travel in flocks, riding in freight trucks ignoring the guidelines of physical- distancing. All are running towards Dhaka with health risks ignoring hundreds of adversities and sufferings of roads only to save their jobs. Trying to save job of the workers by ignoring even death is really heartbreaking. Fear of death is trivial to hunger!

The Bangladesh is undergoing the four stages of Coronavirus at present according to the specialists. COVID-19 four stages is when spread is practically uncontrollable and  there are many major clusters of infection all over the  country. This period is taken into account as the most dangerous period. So, we are in a great danger. Coronavirus can strike a terrible blow at any time. Evidence of their prediction is already being noticed. The number of corona cases in the country is increasing day by day. The districts that were safe are now also affected. However, the good news is that our country still has a much lower rate of infections and deaths than the developed world. So, there is still time to minimize both the incidence and mortality rate by dealing with this step with caution. Unfortunately, what’s going on is nothing but horrible for all.

One garment factory after another is being opened. Mad rush of the workers on roads amid shutdown. Garment workers are returning to Dhaka from the villages in groups, accepting various hardships due to the closure of public transport. No social distance is being ensured. The reason behind opening garment factories is that the competing countries of Bangladesh have opened factories. They have gone into production. In addition, the demand for ready-made garments is increasing as the European market is also becoming active. In this situation, if the domestic factories cannot go into production, then Bangladesh will lose the market of readymade garments. Buyer countries will cancel advance orders too etc. Besides, there are other issues of the domestic economy with it. People's lives will gain momentum, factories will re-open, the country's economy will be active --- this is what everyone wants. But the problem is that the safety of the workers in the factories is not satisfactory. I live in Savar, I observe myself how the workers are being employed without maintaining social distance and hygiene rules. To see the miserable condition, the Savar health official himself has appealed to the concern ministry to close down the garment factories. Besides, urging the workers to come to factories while stopping public transport is a terrible decision. If necessary, the authorities could arrange for them to be brought in special transport by ensuring social distance. Besides, appropriate measures should be taken to prevent the spread of the coronavirus in factories. Such an awful situation is not desirable at this moment where the whole nation is facing an outrageous epidemic. We must think of the biggest interests in this exhaustion of the nation. The employer needs to keep in mind that workers need to be saved if the garment industry is to survive.

The government declared a general holiday in March after the first corona patient was identified in the country. That holiday is still going on, it is heard, the lockdown period will step up. The government has banned all kinds of public gatherings to prevent the spread of the epidemic, and has even imposed restrictions on religious institutions. So, we need to rethink about how reasonable it is to open garment factories when the number of infected is growing. In addition, even if the employer claimed, they has not yet been able to ensure the health and safety of the workers. The decision of those who are in vital positions of the country is very contradictory. They impose on the people whatever they want! Earlier, the workers were asked to come to Dhaka. They came to their work places accepting various difficulties but after reaching the work place they saw the garments closed! Again they came back their home accepting various hardship.  Now they have started coming to Dhaka again with health risks. Nothing but just lack of coordination all around. The coronavirus is still under our control. So by eliminating all the inconsistencies, all concerned should work together as per the advice of the experts otherwise Bangladesh will have to suffer a lot.  We don't have enough time to blaming each other.