Tuesday, 2 August 2016

ভেজাল ওষুধ, নাকাল ভোক্তা

ওষুধ যদি ভেজাল ও নিম্নমানের হয়, তাহলে পাঠক ভাবুন তো কী ভয়ঙ্কর অবস্থা হতে পারে? ভাবলেই ভয়ে গা শিউরে ওঠে। দেশে এখন সবকিছুতেই ভেজাল। বলতে গেলে এ যেন এক ভেজালের রাজত্বে আমাদের বসবাস! মানুষের নীতি-নৈতিকতার স্খলন হচ্ছে। নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য বৃহত্ অন্যায় কাজ করতেও মানুষ এখন পিছপা হচ্ছে না। অসাধু ব্যবসায়ী শুধু ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘন করছে না, জনস্বাস্থ্য হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দেশের প্রতিষ্ঠিত নামি-দামি কোম্পানির ওষুধ ব্যাপক হারে নকল হচ্ছে; বিশেষ করে যে ওষুধগুলোর বাজারে কাটতি বেশি। অধিক মুনাফার লোভে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী এসব ওষুধ নকল করেন। নকল ওষুধের মোড়ক ও আসল ওষুধের মোড়ক দেখতেও প্রায় একই রকম। শিক্ষিত মানুষের পক্ষে দুইয়ের পার্থক্য খুঁজে বের করে আসলটা কেনা বেশ কষ্টসাধ্য। শিক্ষাহীন মানুষের পক্ষে তো একেবারেই অসম্ভব। সবচেয়ে বড় বিষয়, দেশের অধিকাংশ মানুষের ওষুধ সম্পর্কে জ্ঞান বলতে গেলে একদম শূন্যের কোটায়। অসাধু ব্যবসায়ী শ্রেণী এ সুযোগেরই সুবিধা নিচ্ছে। আর আমজনতা নকল ও ভেজাল ওষুধ কিনে প্রতারিত হচ্ছে। শহরের তুলনায় গ্রাম ও মফস্বল শহরে নকল ও ভেজাল ওষুধ বেশি বিক্রি হয়। গ্রামের সহজ-সরল, অর্ধশিক্ষিত ও অশিক্ষিত মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসার ক্ষেত্রকে গ্রাম ও মফস্বল শহরে সম্প্রসারণ করছে। কিছু গ্রাম্য হাতুড়ে ডাক্তার তাদের এ জনস্বার্থবিরোধী কাজ বিস্তারে সহযোগিতা করছেন। কোম্পানির কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সুবিধাপ্রাপ্তির বিনিময়ে তারা ওইসব কোম্পানির নিম্নমানের ওষুধ রোগীদের প্রেসক্রাইব করেন। রোগী নিরুপায় হয়ে ওইসব ওষুধ সেবন করতে বাধ্য হন।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৭৬ সালের জিএমপি (গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস) নীতিমালা অনুসরণ করে মানসম্পন্ন উপায়ে ওষুধ প্রস্তুত না করাসহ আরো বেশকিছু কারণে দেশের ২০টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলসহ ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে। এখন এ সুপারিশ কতটুকু বাস্তবে কার্যকর হয়, তা দেখার অপেক্ষা। ওষুধ কারখানার উত্পাদিত ওষুধের মান নিয়ে আমরা বিভিন্ন সময় পত্র-পত্রিকায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেখি। সেখানে ওষুধ শিল্পের নৈরাজ্য নিয়ে ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, মিডিয়ায় বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও কর্তৃপক্ষ তেমন কার্যকর ব্যবস্থা নেয় না। অনেক সময় দেখা যায়, প্রশাসনের নাকের ডগায় বিক্রি হয় ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ। খোদ রাজধানীর ফুটপাত দিয়ে চলার সময় বিভিন্ন মোড়ে ভেষজ ওষুধের নামে বিভিন্ন ধরনের ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি চোখে পড়ে। এসব ওষুধপত্র উপকারে তো আসেই না, বরং জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। তবে তা যথেষ্ট নয়। এছাড়া বেশির ভাগ সময় অভিযানগুলো পরিচালিত হয় ওষুধের দোকানগুলোয়। কিন্তু আদৌ এর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। কারণ ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ তো দোকানদার উত্পাদন করে না, উত্পাদন করে কোনো না কোনো অবৈধ ওষুধ কোম্পানি। তাই ভেজাল ওষুধ রোধে সবার আগে ভেজাল ওষুধ উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান চিরতরে বন্ধ করতে হবে। এছাড়া অভিযানগুলো সীমিত পরিসরে পরিচালিত না করে গ্রাম ও মফস্বল শহরেও ছড়িয়ে দিতে হবে। গ্রাম্য ডাক্তারদের বিষয়েও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা দরকার, যাতে মানুষের জীবন নিয়ে তারা ছেলেখেলা করতে না পারে।

No comments:

Post a Comment